দেশে তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কার জরুরি বলে জানিয়েছেন ১৯ তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আজ শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই মতামত জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাক হৃদরোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এবং দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্যই দায়ী এসব অসংক্রামক রোগ। শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ব্যতীত এসডিজির ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাসের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এখনো ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। তামাকের সার্বিক ক্ষতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে এফসিটিসি-এর আলোকে আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনীতে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের কাজ করছে। খসড়াতে সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরো জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কার ঠেকাতে কোম্পানিগুলো রাজস্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান হারানো, ধূমপান বৃদ্ধি প্রভৃতি অসত্য তথ্য ছড়িয়ে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাসের পরে এবং ২০১৩ সালে সংশোধনের পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। স্মোকিং জোন পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনগণকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারেনা এবং একারণে ইতোমধ্যে ৭৯টি দেশ স্মোকিং জোন বাতিল করেছে । তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভেপিং আসক্তি ঠেকাতে শ্রীলঙ্কা, ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৪২টি দেশ এসব পণ্য বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সহজলভ্যতা কমাতে বিশ্বের ১১৮টি দেশ সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করেছে। শক্তিশালী আইন তামাক ব্যবহার কমায় যা ব্রাজিল, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তামাক কোম্পানির কূটকৌশলে বিভ্রান্ত না হয়ে দ্রুত আইন সংস্কার করার আহ্বান জানান বক্তারা।
অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা), এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বিসিসিপি, বিইআর, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, ডাস্, ডর্প, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস, নারী মৈত্রী, নাটাব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, পিপিআরসি, প্রত্যাশা, তাবিনাজ, টিসিআরসি, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এবং প্রজ্ঞা সম্মিলিতভাবে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।