নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর |
“নৈতিকতার পুরাতন খোলসকে প্রশ্ন করলেই সীমারেখা ভাঙা যায়”— এমন চ্যালেঞ্জিং বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো মননচর্চার জনপ্রিয় আয়োজন ‘ফিরেদেখা’র ৩৬২তম মননপাঠের আসর। রংপুরের আইডিয়া পাঠাগারে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে এই ব্যতিক্রমধর্মী আসরটি অনুষ্ঠিত হয়।
আসরের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “লেখকের নৈতিকতা ও চিন্তার সীমারেখা”। সমসাময়িক সামাজিক প্রশ্ন, নৈতিক বিবর্তন এবং লেখকের দায়-সীমা নিয়ে গভীরতর আলোচনা হয় এ পর্বে। উপস্থিত বক্তারা বলেন, “নৈতিকতা কোনো স্থির ধারণা নয়, বরং তা সমাজ ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। একজন লেখকের কাজ কেবল সমাজের প্রতিফলন তুলে ধরা নয়, বরং সে সমাজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নগুলোকে সাহসের সঙ্গে উন্মোচন করাও।”
আসরের শুরুতে একটি প্রাঞ্জল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক ও প্রাবন্ধিক মো. আব্দুররাজ্জাক। এরপর আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট কবি কাইয়ুম খান, লেখক ও গবেষক তনু আক্তার, সাহিত্যপ্রেমী ও সাংবাদিক নীল রতন সরকার এবং শিক্ষক ফারুক হোসেন। আসরটি সঞ্চালনা করেন ‘ফিরেদেখা’র নিয়মিত সংগঠক সাকিল মাসুদ, সভাপতিত্ব করেন লেখক ও মননচর্চাকারী তাপস মাহমুদ।
আলোচকেরা বলেন, সাহিত্যের প্রধান শক্তি হলো— প্রশ্ন তোলা। তথাকথিত ‘নৈতিকতা’ অনেক সময় ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ কিংবা সৃজনশীল ভাবনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই বাধাকে অতিক্রম করতেই লেখকের কলমকে হতে হয় সাহসী, প্রশ্নবিদ্ধ করতে হয় ভণ্ডামি ও সংস্কারের মুখোশ।
তাঁরা আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিনির্ভর হলেও তাদের চিন্তার বিস্তার ঘটাতে দরকার মুক্ত আলোচনার সুযোগ ও মানসিক উদারতা। এর জন্য চাই মননচর্চার উন্মুক্ত পরিসর, যেখানে তরুণদের চিন্তা করতে শেখানো হবে, মুখস্থ নয়— যুক্তি ও বোধ দিয়ে ভাবতে শেখানো হবে।
প্রতি সপ্তাহে আয়োজিত এই মননপাঠ আসরটি রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের সাহিত্য ও মননপ্রেমীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। তরুণ লেখক, পাঠক ও চিন্তাশীলদের অংশগ্রহণে আসরটি ক্রমেই হয়ে উঠছে চিন্তার চর্চাকেন্দ্র।
শেষে আয়োজকরা জানান, আগামী পর্বে আলোচনা হবে “সৃজনশীলতা বনাম সেন্সরশিপ” বিষয় নিয়ে।