নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর | ১২ জুলাই ২০২৫
সাহিত্য কি কেবল সৌন্দর্যের সাধনা, না কি তা সমাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তোলে? সমালোচনা কি লেখকের প্রতিদ্বন্দ্বী, না কি পথপ্রদর্শক সহযাত্রী? এমন প্রশ্নকে কেন্দ্র করে রংপুরের আইডিয়া পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফিরেদেখা’ আয়োজিত ৩৬৩তম মননপাঠ। আলোচনার প্রতিপাদ্য ছিল—“সাহিত্যে সমালোচনা: দ্বন্দ্ব না সংলাপ?”
আসরের সূচনা করেন গবেষক ও প্রাবন্ধিক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তাঁর প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, “সাহিত্য সমালোচনা কেবল বিরোধ নয়, বরং তা লেখকের চিন্তাকে গভীরতর করে তোলে। সমালোচক যদি প্রশ্ন তোলে, লেখকের দায়িত্ব তা থেকে নতুন অর্থের খোঁজ করা।”
তিনি বলেন, “যেখানে চিন্তা সীমাবদ্ধ, সেখানে সমালোচনাও আড়ষ্ঠ হয়ে পড়ে। সমালোচকের কাজ হওয়া উচিত লেখার কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভাবনার নতুন পরিসর উন্মোচন করা।”
আলোচনার এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাহিত্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন—বাংলাদেশ বেতারের সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও লেখক মনোয়ারা বেগম, লেখক মিলন মজিদুল হক, নীল রতন সরকার, এস. এম. শামীম, কামরুল ইসলাম, মইনুল পথিক, মোজাম্মেল হক, রাজেন দাস প্রমুখ।
তাঁরা বলেন, “সমালোচনা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। এক সময়ের যা সত্য, তা অন্য সময় এসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। লেখকের কাজ সেই প্রশ্নের গভীরে ঢুকে নতুন ব্যাখ্যা তুলে ধরা।”
আলোচনায় উঠে আসে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক—সমালোচনা যেন কেবল ত্রুটি ধরার উপায় না হয়ে ওঠে, বরং মতবিনিময়ের একটি মানবিক ক্ষেত্র তৈরি করুক। বক্তারা বলেন, “সংলাপই সাহিত্যের প্রাণ। সেখানে দ্বিমত, বিতর্ক ও বিবেচনার সুযোগ যত বেশি থাকবে, সাহিত্য ততই ঋদ্ধ হবে।”
আসরের সভাপতিত্ব করেন সাহিত্যসংগঠক তাপস মাহমুদ, আর সঞ্চালনায় ছিলেন কবি ও সংগঠক সাকিল মাসুদ।
রংপুরের মতো মফস্বল শহরে সাহিত্যচর্চার এমন প্রাণবন্ত আয়োজন নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি পূরণ করছে। চিন্তার জায়গাকে চর্চার জায়গায় রূপান্তর করতে যে আয়োজন দরকার, ‘ফিরেদেখা’র এই মননপাঠ ঠিক তেমনই একটি প্রয়াস।