রংপুরে ২০২৪ সালের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ হারানো মুদি দোকানি ছমেছ উদ্দিনের মৃত্যু—১০ মাস পর সেটাই হয়ে উঠল এক ‘হত্যা মামলা’র ভিত্তি। আর সেই মামলাতেই উঠে এল এক শিক্ষক, যিনি সরব হয়েছিলেন প্রতিবাদে, যিনি হয়ে উঠলেন ষড়যন্ত্রের ‘টার্গেট’ বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হক।
রোববার (২২ জুন) বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হলেও সেখান থেকে শুনানির জন্য সময় নেয়া হয় ২৪ জুন পর্যন্ত। এরপর আইনি লড়াইয়ের পথে মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বারস্থ হন তার আইনজীবীরা। এবং সেখানেই মিলল মুক্তির সুর।
মামলার অদ্ভুত এক চিত্র—প্রধান আসামি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও এমনকি বিএনপি নেতাও!
এজাহারভুক্ত ৫৪ আসামির তালিকায় মাহমুদুল হকও, যিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছেন।
বিচিত্র সব প্রশ্নে মুখর আদালত চত্বর
জামিন আবেদনের আগে-পরে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন—“স্বাধীন মত প্রকাশের অপরাধেই যেন শাস্তি পাচ্ছেন শিক্ষক।”
ছাত্রদের কণ্ঠে প্রতিবাদ:
“যে শিক্ষক অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেন, তাকেই যদি হেনস্তা করা হয়—তাহলে কারা থাকবেন ন্যায়পথে?”
এজাহারে কি সত্যিই হত্যা?
মামলার বাদী ছমেছ উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা বেগম ও ছেলে আশিকুর রহমান স্বীকার করেছেন—“ছমেছ পুলিশের ধাওয়ার পরই হৃদরোগে মারা যান। আমরা কেবল পুলিশের কথামতো কাগজে সই করেছি। কাকে কাকে আসামি করা হয়েছে জানি না।”
তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও চমকপ্রদ বিষয়:
ছমেছ উদ্দিনকে ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদ’ হিসেবে তুলে ধরে মামলা সাজানো হয় রাজনৈতিক রূপ দিতে। অথচ পরিবারের বক্তব্যেই যেন ফাঁস হয়ে যায় মামলার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য।
পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য ২ জুলাই। তদন্ত প্রতিবেদনও দিতে হবে ওইদিনই।
শেষ কথা
জুলাই চেতনার ওপর আঘাত, স্বাধীনতার চর্চায় হস্তক্ষেপ, না কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা—এই মামলা এখন তাই শুধু একটি ‘আইনগত’ লড়াই নয়, বরং হয়ে উঠেছে চেতনার যুদ্ধ।