লালমনিরহাট–বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের মহেন্দ্রনগর বিশ্ব গোডাউন সংলগ্ন অংশ এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকায় তীব্র জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগে সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকাল থেকে লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় গোল চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এবং লালমনিরহাট-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন—“বুড়িমারী মহাসড়ক বন্ধ থাকায় ভারী যানবাহনগুলো বাধ্য হয়ে পৌরসভার সংকীর্ণ সড়ক ব্যবহার করছে। এতে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে এবং সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নিলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে। প্রশাসনের উচিত জরুরি ভিত্তিতে মহিপুর সড়কটি উন্মুক্ত করা।”
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন—জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একে এম মমিনুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি আফজাল হোসেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিছুর রহমান ভিপি আনিছসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও আঙ্গিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মহাসড়ক ধরে ভারী যানবাহন চলাচল না করায় সমস্ত ট্রাক-পিকআপ এখন শহরের ভেতরের সড়ক দিয়ে চলছে। এতে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকছে। ক্রেতারা দোকানে আসতে পারছেন না, ফলে ব্যবসায় ভাটার ঢেউ নেমেছে।
মিশন মোড় এলাকার ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—“সড়কে এমন যানজট যে মানুষ দোকানে ঢুকতেই পারছে না। বিক্রিও আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের পথে বসতে হবে।”
একই এলাকার মুদি দোকানি ফিরোজা বেগম বলেন—“গাড়ির চাপ ও ধুলাবালিতে দোকান খুলে বসা মুশকিল। রোগ-শোকে মানুষ ভুগছে। তবুও সড়কের কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।”
ব্যবসায়ীদের দাবি—রাস্তা দ্রুত মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক না হলে অর্থনীতি ও জনজীবন দুইই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।মহাসড়ক বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন স্কুল–কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সড়কের যানজট এড়িয়ে অনেকেই দীর্ঘপথ হেঁটে ক্লাসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন বলেন—“ঘণ্টাখানেকের পথ এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগছে। দেরি হলে শিক্ষক শাসন করেন, কিন্তু আমাদের দোষ কী? দ্রুত সড়ক স্বাভাবিক করা জরুরি।”
যাত্রীরা জানান, বাস ও ট্রাক ছোট রাস্তায় ঢুকায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও নেমে এসেছে ভোগান্তির ছাপ।
চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীরা বলছেন, যানজটের কারণে জরুরি রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। এতে চিকিৎসায় ঝুঁকি বাড়ছে।মিশন মোড় এলাকায় একজন রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান—“সাইরেন বাজিয়েও গাড়ি চলছে না। কখন কোথাও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে বলা যায় না।”
স্থানীয় জনসাধারণের দাবি—জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির দ্রুত সংস্কার নিশ্চিত করে জনদুর্ভোগ দূর করা হোক। মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন—মহাসড়কটি দ্রুত সংস্কার ও চালু না হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।অবস্থান কর্মসূচিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

রকিবুল ইসলাম রুবেল/লালমনিরহাট 


























