নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর অসময়ে তিস্তার ভাঙন

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিকাল ৭:১০ সময়
Share Tweet Pin it
[নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর অসময়ে তিস্তার ভাঙন]

তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ায় উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে নদী ভাঙন বেড়েছে। বিশেষ করে কাপাসিয়ার পুঁটিমারি চর গ্রামে অসময়ে নদী ভাঙনের কারণে স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিবছর গড়ে ৪৫০ বসতভিটা, ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠান তিস্তায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

গত ৫ বছরে আড়াই হাজার বসতভিটা, এক হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি, ৫০ কিলোমিটার রাস্তাঘাট, ৩০টি ধর্মীয় ও ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

 

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর জন্য সামান্য ত্রাণ বিতরণ ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। সর্বস্বহারা মানুষ এলাকা ছেড়ে দিনমজুরি করতে চলে গেছেন ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায়।

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় সারা বছর নদী ভাঙ্গনে ব্যতিব্যস্ত মানু

সরকারি ভাবে নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ সম্ভব হচ্ছে না। মানুষকে রক্ষা করতে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন ঠেকাতে হবে। চরের প্রতিটি মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে সারা বছর নদী ভাঙন চলছে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উজানের পলি জমে নদী ভরে গিয়ে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে তিস্তা অসংখ্য শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। 

ভুক্তভোগীরা জানান, এ কারণে অসময়েও নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি কমলে উজানে আর পানি বাড়লে ভাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে উজানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সংগ্রাম পরিষদ, এনজিও , স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধিরা দাবি তুললেও আজ পর্যন্ত কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।

 

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর কষ্টের সীমা নেই। তার ইউনিয়নের সবগুলো ওয়ার্ড নদীর চরে। চরের এক একটি পরিবার বছরে ৪ থেকে ৫ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়েন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাহায্য নেই।

কাপাশিয়া ইউনিয়নের তিনবারের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক উপজেলা সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, নদী খনন, ড্রেজিং, সংরক্ষণ, মেরামত এবং শাসন ছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। নদী খনন ও ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ একমুখী করলে নদী ভাঙন কমে যাবে। তার দাবি, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও টিউব ও জিও ব্যাগ এখন কোনো কাজে আসছে না। চরের মানুষের হাহাকার দূর করতে হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে হবে। তা না হলে এই উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবির বলেন, তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে একটি সম্ভাবনাময় জোন। ধান, গম, ভূট্টা, বাদাম, কুমড়া, তরমুজ, আলু, মরিচ, পিয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে তিস্তার বালুচর। কিন্তু প্রতিবছরের ভাঙন চরের কৃষকদের স্বপ্ন নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রতিবছর ভাঙনে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গণ রোধের ব্যবস্থা করলে চরের কৃষকরা সচ্ছল ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজির হোসেন বলেন, এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। তবে স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। তা না হলে এই জনপদের মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধ সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখানে তাদের করার কিছুই নাই। নদীভাঙন দেখা দিলে জিও টিউব, জিও ব্যাগ ফেলা এবং সরকারের ওপর মহলে তথ্য প্রদান ছাড়া আপাতত সেখানে আর কোন কাজ নেই তাদের।