গোরস্থানের নির্জনতায় যাদের বিচরণ, ঈদ উৎসবে করি তোমাদের শ্রদ্ধায় স্মরণ"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রংপুরে দেড় শতাধিক কবর খোদক ও মরদেহ গোসলকারী, তৃতীয় লিঙ্গ, টাউন হল চত্বরে কর্মরতদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ, সম্মাননা সার্টিফিকেট এবং ইফতার মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে "বাংলার চোখ" ও "তানবীর ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন" এর উদ্যোগে ১৫০ জন কবর খোদক, মরদেহ গোসলকারী, তৃতীয় লিঙ্গ, কোট টাউন হল চত্বরে কর্মরতদের মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। প্রতিটি উপহার প্যাকেজে ছিল সেমাই, চিনি, চাল, আতপ চাল, আলু সোয়াবিন তেল, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি ও নগদ অর্থসহ মোট ৪ হাজার টাকার সামগ্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলার চোখের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হাজী মো. তানবীর হোসেন আশরাফী। উদ্বোধন করেন ৭২ ব্রিগেড কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। এছাড়া রংপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গোরখোদক আবুল কাশেম কাচু মিয়া বলেন, "দিন-রাত আমাদের কবর খুঁড়তে হয়, কিন্তু আমাদের খোঁজ কেউ রাখে না। তানবীর ভাই পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমরা খুব খুশি।"
মুন্সিপাড়া কবরস্থানের দাফন কাজে নিয়োজিত আতিয়ার বলেন, "২০০৭ সাল থেকে কবরস্থানের দেখাশোনা করছি, কেউ কখনো খোঁজ নেয়নি। তানবীর ভাই আমাদের ঈদ উপহার দিয়েছেন, যা আমাদের জন্য অনেক বড় সাহায্য। আল্লাহ তাঁকে এবং বাংলার চোখের সবাইকে ভালো রাখুন।"
হাজী মো. তানবীর হোসেন আশরাফী বলেন, "সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে সম্মানিত করা হলেও কবর খোদক ও মরদেহ গোসলকারীদের প্রতি কারও দৃষ্টি পড়ে না। তাই তাদের সম্মানিত করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতেও এমন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।"
ঈদ উপহার বিতরণ আয়োজনে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও সাংবাদিক মহলের বিশিষ্টজনদের সাথে ইফতার ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের আহ্বায়ক ছিলেন মো. মিজানুর রহমান মিজান এবং সদস্য সচিব মো. মোকাররম হোসাইন। তাঁরা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলার চোখ এর ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
এই মহতি আয়োজনে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শতাধিক সংগঠক উপস্থিত ছিলেন।