ঠাকুরগাঁওয়ে খোলা সয়াবিন তেলে মেশানো হচ্ছে পামঅয়েল। এরপর এই তেল আকর্ষণীয় বোতলে মোড়কজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে শহরের বিভিন্ন দোকান ও বাজারে। ভেজাল সয়াবিনের এই কারখানাটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ এলাকার পাইকপাড়ায়। উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কাজিপাড়ার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম এই কারখানার স্বত্বাধিকারী।সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকপাড়ায় একটি গোডাউন ঘরকে ব্যবহার করা হচ্ছে ভেজাল সয়াবিন ফ্যাক্টরি হিসেবে। সেখানে ৬/৭ জন নারী ও পুরুষ কাজ করছেন শ্রমিক হিসেবে। কিছু শ্রমিক স্বচ্ছ প্লাস্টিকের বোতলে লেবেল লাগানোর কাজ করছেন। অন্যদিকে একটি ড্রামে খোলা সয়াবিনের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে পামঅয়েল। পরে সেই তেল পাইপের সাহায্যে নলের মাধ্যমে বোতলে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। বোতলের গায়ে লাগনো লেবেলগুলোতে রান্নার স্বাদ, কোনোটিতে রমণীর সাথি নাম ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি বোতলে বিএসটিআই এর লোগো মার্ক ব্যবহার করা হয়েছে। মেসার্স ফ্রেন্ডস প্রোডাক্টের এই বোতলে ফর্টিফাইড সয়াবিন তেল লিখে রেখেছেন প্রতারক চক্রটি।
ঠাকুরগাঁও রোড বাজারের মোদি দোকানের রেকে সাজানো মিলে এই ভেজাল সয়াবিন। জিজ্ঞাসা করলে দোকানদার বাবু বলেন, ‘আমি বোতলের গায়ে বিএসটিআই এর সিল দেখেই বোতলটি বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়েছি। এটা যে ভেজাল তেল, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না।’
দোকানে তেল কিনতে আশা ক্রেতা তানভীরুল হায়দার বলেন, ‘আমরা অনেকেই খোলা সয়াবিন কিনি। এখন যদি প্রক্রিয়াজাত বোতলের সয়াবিনেও এমন ভেজালের আশঙ্কা থাকে তাহলে কিভাবে নিশ্চিত থাকবো। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই প্রতারকচক্র সুযোগ পাচ্ছে।
ভেজাল কারখানার মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসটিআই এর লাইসেন্স পাওয়া এত সহজ না। অনেকেই এভাবে ব্যবসা করছে। বিভিন্ন জেলায় এরকম ফ্যাক্টরি আছে। সবাই এভাবেই পামঅয়েলের সঙ্গে সয়াবিন মিশিয়ে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাই আমিও করছি।ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘এটা অবৈধ কারখানা। তারা প্রশাসনের নজরের বাইরে এই ভেজাল পণ্য তৈরি করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভোজ্য তেল ব্যবহারে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। ভেজাল তেলে যেসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি হয় তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই তেল ব্যবহারের কারণে আমাদের কিডনি ও লিভারের সমস্যা হতে পারে এমনকি গর্ভবতী মায়ের পেটের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।