ভূমি কর প্রদানে সচেতনতা বৃদ্ধিতে রংপুরে অনুষ্ঠিত হলো 'ভূমি মেলা ২০২৫

মাহফুজ আলম প্রিন্স,রংপুর

২৫ মে ২০২৫, দুপুর ১২:৪৩ সময়
Share Tweet Pin it
[ভূমি কর প্রদানে সচেতনতা বৃদ্ধিতে রংপুরে অনুষ্ঠিত হলো 'ভূমি মেলা ২০২৫]

প্রতিপাদ্য: “নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি”

ভূমি সংক্রান্ত জনসচেতনতা বাড়ানো, ভূমি সেবার ডিজিটালাইজেশন এবং নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের গুরুত্ব সম্পর্কে নাগরিকদের অবহিত করতে রংপুরে আয়োজন করা হয় ভূমি মেলা ২০২৫।
রোববার সকালে রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার মূল প্রতিপাদ্য ছিল: “নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি”। প্রতিপাদ্যটি ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা হ্রাস, কর প্রদানে স্বচ্ছতা এবং নাগরিকদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বার্তা বহন করে।
বর্ণাঢ্য র‍্যালির মাধ্যমে সূচনা
দিনের শুরুতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়। র‍্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। র‍্যালিতে অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা, এনজিও প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং দেশাত্মবোধক স্লোগানে র‍্যালিটি ছিল জমকালো ও অর্থবহ।
আলোচনা সভা: বক্তব্যে সচেতনতার আহ্বান
র‍্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, এবং জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন: নাগরিকদের মধ্যে কর প্রদানের অভ্যাস তৈরি না হলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা যাচ্ছে। এই সুবিধা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে।”
ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন,ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধে সবার আগে প্রয়োজন নিয়মিত হালনাগাদ ও ভূমি কর পরিশোধ। এতে করে যে কেউ নিজের জমির মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারে।”
জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল জানান, ভূমি অফিসে দুর্নীতি ও হয়রানি রোধে ই-নামজারি, অনলাইন পরিশোধ, ডিজিটাল নকশা যাচাইয়ের মতো সেবাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে এ ধরনের মেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মেলায় ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা
ভূমি মেলায় সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫টি স্টল স্থান পায়। এর মধ্যে ভূমি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, রাজস্ব বিভাগ, ডিজিটাল ভূমি সেবা কেন্দ্র, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণ ইউনিটের স্টল উল্লেখযোগ্য।
মেলায় উপস্থিত দর্শনার্থীরা ভূমি উন্নয়ন কর কীভাবে অনলাইনে প্রদান করা যায়, নামজারি আবেদন কীভাবে করতে হয়, ভূমির রেকর্ড ও খতিয়ান যাচাই, ডিজিটাল নকশা দেখতে ও জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে কী করতে হয়—এসব বিষয়ে হাতে-কলমে সেবা গ্রহণের সুযোগ পান।
শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমি সচেতনতা
মেলায় অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ‘ভূমি কর দিব, দেশ গড়ব’—এমন স্লোগানে অংশ নেয় র‍্যালি ও আলোচনা সভায়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের জন্য আলাদা সচেতনতামূলক সেশন, কুইজ প্রতিযোগিতা ও প্যাম্পলেট বিতরণ করা হয়।
ভূমি উন্নয়ন কর: রাজস্ব ও নিরাপত্তা দুটোই
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান কেবল সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেই নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সুরক্ষা নিশ্চিতে অন্যতম উপায়। জমির মালিকানা নির্ধারণ ও হালনাগাদ রেকর্ড থাকলে জমি নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা বা প্রতারণার সুযোগ কমে যায়।
ভূমি মেলার মতো আয়োজন দেশের অন্যান্য জেলাতেও করার পরামর্শ দেন তারা।
উপসংহার
রংপুরে অনুষ্ঠিত ভূমি মেলা ২০২৫ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি নাগরিকদের ভূমি সচেতনতা তৈরির একটি কার্যকর পদক্ষেপ। নিয়মিত কর প্রদানের অভ্যাস, ডিজিটাল সেবার প্রয়োগ এবং জবাবদিহিমূলক ভূমি ব্যবস্থাপনার দিকে যাত্রা আরও গতিশীল করতে ভূমি মেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।