রংপুরে সনাক এর উদ্যোগে মানববন্ধন

১৬ মার্চ ২০২৫, বিকাল ৫:৫ সময়
Share Tweet Pin it
[রংপুরে সনাক এর উদ্যোগে মানববন্ধন]

১৬ মার্চ ২০২৫, রংপুর: “নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা: বিচার চাই এখনই” দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)। সম্প্রতি দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতের দাবিতে আজ (১৬ মার্চ ২০২৫) সকালে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন সনাক, ইয়েস, এসিজিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
 
সকাল ১১টায় ঘন্টাব্যাপী চলমান মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য । এ সময় সংহতি প্রকাশপূর্বক বক্তব্য প্রদান করেন ব্লাস্ট রংপুরের কোঅর্ডিনেটর ও সনাক সদস্য এডভোকেট দিলরুবা রহমান, স্বর্ণনারী এসোসিয়েশন এর সভাপতি মঞ্জুশ্রী সাহা, সনাক সদস্য অ্যাডভোকেট এ এ এম মুনীর চৌধুরী প্রমূখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণের শিকার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এর বিচার দাবি জানাই। একইসাথে বিবেকবান মানুষরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ভয়েসটা রেইস না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই যাবে। দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই এর ভয়াবহ শিকার হচ্ছেন কন্যাশিশুসহ সকল বয়সী নারী। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় সারা দেশে নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতংকগ্রস্থ সময় অতিবাহিত করছে। আছিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে যেমন ভয়ে শিহরিত হয়েছি। আমরা সেই পরিস্থিতিতে এখনো আছি। অনেকেই ঈদের কিনা কাটা রাতে বন্ধ করে দিয়েছে  কেন কারণ আমাদের নিরাপত্তার সমস্যা আছে। আমাদের এই আমার পরিস্থিতি কতদিন থাকবে তা আমরা সমাধান চাই। যারা নিপীরণকারী, ধর্ষক ও সমাজবিরোধী তাদের প্রতি শূণ্য সহিঞ্চুতা প্রদর্শন করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।”
 
এছাড়া, সনাক সভাপতি ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, “সনাক রংপুর থেকে আজকে আমরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। গত জানুয়ারি মাসের ৩৯ জন নারী এককভাবে এবং সঙ্গবদ্ধভাবে ধর্ষিতা হয়েছেন। ধর্ষণের হাত থেকে নারী, শিশু এমনকি বৃদ্ধারাও বাদ যাচ্ছে না। এটা এক ধরনের ব্যধিতে পরিণত হয়েছে, এক ধরনের মহামারিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং আমরা দ্রæত এর বিচার দাবি জানাচ্ছি।”
 
মানববন্ধনে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়নে সনাক, ইয়েস, এসিজি ও টিআইবি’র পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন ইয়েস এর সহদলনেতা তাসলিমা আক্তার মিম। দাবিসমূহ হলো-
 
১. বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও “নতুন বাংলাদেশ”- এর মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং সব ধরনের যৌন নির্যাতন, সহিংসতা ও বৈষম্য প্রতিহত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এসব অপরাধের সাথে জড়িতদের দ্রæততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি অপরাধের শিকার পরিবারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা।
২. সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার ও বিদ্যমান আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রসহ সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা।
৪. সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, পেশাজীবী সংস্থা, সকল প্রকার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষের সমঅধিকার ও সমমর্যাদার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ঘোষণাসহ চর্চা প্রতিষ্ঠার সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. টেকসই উন্নয়ন অর্জনের কর্মপরিকল্পনায় অভীষ্ট-৫ (জেন্ডার সমতা) ও ১৬ (শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান) কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধের পূর্বশর্ত হিসেবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণসহ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নানা অজুহাতে যত্রতত্র হেনস্থা রোধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন।
৬. নারী ও শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার নারী অধিকার হরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকে Ñ বিশেষ করে প্রশাসন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ, শুদ্ধাচার, জবাবদিহিতা ও সার্বিক সুশাসন নিশ্চিত করা।
৭. জেন্ডার সমতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নারীর অভিগম্যতা নিশ্চিত, ইন্টারনেট ও প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সুলভ করা এবং বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অনলাইনে সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ বিশেষায়িত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
৮. যে সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে বা সমাজে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ্যে কাজ করছেনÑতাদের উৎসাহিত, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা ও সুরক্ষা প্রদান করা।  
৯. মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে সকল প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ নারীবান্ধব অভিযোগ প্রদান ও নিরসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে; নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বন্ধে ব্যক্তির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা ও প্রভাব বিবেচনা না করে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রæত বিচার নিষ্পত্তি করা।
১০. নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সাধারণ জনগণের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।  
১১. জাতীয় হেল্পলাইন ও অভিযোগ জানানোর হটলাইন নম্বরগুলোর প্রচার ও কার্যকরতা বৃদ্ধি।  
 
এ সময় টিআইবি কর্তৃক প্রকাশিত ধারনাপত্র প্রচার করা হয়।