নির্বাচনের জন্য সংস্কারেই বেশি জোর প্রধান উপদেষ্টার

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, দুপুর ১:২২ সময়
Share Tweet Pin it

নির্বাচনের জন্য সংস্কারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে সংস্কারের জন্য ঐক্যের প্রতিও গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না।” শুক্রবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য সংস্কার নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশু হত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।” ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ রূপান্তর পর্বে প্রবেশ করার অধিকার অর্জন করেছে। এ রূপান্তর দ্রুত সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমাদের সব শক্তি নিয়োজিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে।” পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই- উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সব ধরনের বৈষম্য অবসানের রাজনৈতিক আয়োজন নিশ্চিত করে এদেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সমতাভিত্তিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এ কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের লক্ষ‍্য হবে। এসময় অন্তর্বর্তী সরকার ‘বাংলাদেশকে আবার সাম‍্য, মানবিক মর্যাদা ও ন‍্যায়বিচারের পথে ফেরানোর লক্ষ‍্যে কাজ করছে’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, “ন‍্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ছাড়া জুলাইয়ের শহীদদের আত্মদান অর্থবহ হতে পারে না। ফ‍্যাসিবাদ বাংলাদেশকে আদর্শভিত্তিক সব রকমের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। জাতীয় সংলাপে লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশকে মুক্তই করেনি, আমাদের স্বপ্নকেও তুমুল সাহসী করে তুলেছে। বাকহীন বাংলাদেশ জোরালো কণ্ঠে আবার কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই দৃঢ় কণ্ঠ আবার ঐক্য গঠনে সোচ্চার হয়েছে।” “ঐক্য আমাদের মূল শক্তি”- এমন মন্তব্য করেন মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের ঐতিহাসিক মাত্রায় বলীয়ান করেছে।” এসময় ‘গত পাঁচ মাসে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। এই ঐক‍্যের জোরেই আমরা এখন অসাধ্য সাধন করতে পারি। এখনই আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ। এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যা সব নাগরিকের জন্য সম্পদ ও সুযোগের বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা দেবে।” রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিজ সৃজনশীলতায় উদ্যোক্তা হতে পারা অথবা ইচ্ছা অনুযায়ী কর্মজীবন বেছে নিতে পারার ওপর গুরুত্বারোপ নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “যত নিম্নআয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন- প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোক বা পুরুষ, তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যেন যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন। অথবা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তাই যেন বেছে নিতে পারেন। এসময় রাষ্ট্রের প্রতি সব নাগরিকের অধিকারের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন ড. ইউনূস। বলেন, “এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সব অধিকার দিতে বাধ্য। রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার অন্য কোনো পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।