কুড়িগ্রামে টাকা দিলেই মিলছে প্রতিবন্ধী ভাতা

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, দুপুর ১:২৫ সময়
Share Tweet Pin it

কুড়িগ্রামে টাকা দিলেই মিলছে প্রতিবন্ধী ভাতা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও কুড়িগ্রামে টাকা দিলেই মিলে যাচ্ছে প্রতিবন্ধী ভাতা। অনলাইন আবেদন ছাড়াই ভিন্ন জেলার মানুষও নিতে পারছে এই সুবিধা। ঘুষের বিনিময়ে একটি চক্র প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে লুফে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অথচ এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। জামালপুর দেওয়ানগঞ্জের মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মহিরন খাতুন। ঘরবাড়ি জমিসহ পালের গরু-ছাগল আছে। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা নেই। কিন্তু সরকারি প্রতিবন্ধী তালিকায় নাম আছে তার। এরইমধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে পেয়েছেন ১০ হাজার ২৭২ টাকা। অন্যদিকে একই গ্রামেই বাস করেন সুবর্ণা খাতুন। বাড়িতে সেলাই মেশিনের কাজ করে চলে তার সংসার। শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল হলেও তিনিও পেয়েছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। মহিরন খাতুন বলেন, আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়েছি ১০ হাজার টাকা। এর বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা দেওয়া লাগছে। সুবর্ণা খাতুন বলেন, ‘একবার পাইছি ১০ হাজার ২৭২ টাকা। আবার পাইছি ২৫০০ টাকা। আমি যখন জিজ্ঞেস করছিলাম তখন বলছিল সমাজসেবা অধিদপ্তরের টাকা। পরে জানতে পারছি এটা প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা।’ দেওয়ানগঞ্জের প্রায় চার শতাধিক সুস্থ মানুষ এই প্রতিবন্ধী ভাতার সুযোগ পাচ্ছেন কুড়িগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে। এমনকি জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাতেও ঘুষ নিয়ে শত শত সুস্থ নারী-পুরুষকে প্রতিবন্ধী তালিকায় ঢুকিয়েছে একটি মহল। এক নারী বলেন, আমার স্বামী সুস্থ সবল। গাড়ি চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করেন। তবু প্রতিবন্ধী তালিকায় নাম লিখে দেওয়ার নাম করে ৫ হাজার টাকা নিয়েছে।’ এই সিন্ডিকেট চক্রের প্রধান রৌমারি ও রাজিবপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন। তার সঙ্গে জড়িত ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ হেল কাফী ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী তানজিনা আক্তার। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন সমাজকর্মী তানজিনা আক্তার তানিয়া বলেন, অফিসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে। ছোট কর্মচারী আমি, এসব লিস্টে নাম দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।’ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দীন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দুই-একটা প্রমাণ দেখান। স্বাক্ষর জাল করে প্রতিবন্ধী ভাতায় অনিয়মের বিষয়ে এর আগেও তানিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে খবর হয়েছে গণমাধ্যমে। ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তানিয়াকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি। কী করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা? কুড়িগ্রাম সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, ‘তিনটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। অচিরেই হয়তো তারা যাবে। ওরা গিয়ে তদন্ত করবে।’ রৌমারীতে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিবন্ধীর তালিকায় ছিলেন ২১৮৮ জন। ২০২৪ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজারে। আর রাজিবপুরে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১০০৫ জন। চলতি বছরে সেখানে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন ১৭৬৮ জন।