রংপুর, ১৭ এপ্রিল: সুন্দরবনের হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা, দুর্লভ ইতিহাসের সন্ধান-ঐতিহ্য, বাঘ ও জীববৈচিত্র নিয়ে রচিত গ্রন্থ “সুন্দরবননামা” এবং বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামে বিপ্লব-বিদ্রোহের পঙক্তির ভূমিকাভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ “কবিতা গান স্লোগানে দেশ-কাল-জীবন” এই দুই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হলো রংপুর নগরীতে।
গতকাল সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর আইডিয়া পাঠাগারে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজিক সংগঠন ফিরেদেখা'র আয়োজনে বৈশাখী কবিতা আড্ডায় এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। “সুন্দরবননামা” গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন সুন্দরবন গবেষক ও গ্রন্থকার ইসমে আজম ঋজু। পাশাপাশি “কবিতা গান স্লোগানে দেশ-কাল-জীবন” বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন গ্রন্থকার ও কবি তাপস মাহমুদ। বইদুটি প্রকাশ করেছে আইডিয়া প্রকাশন রংপুর।
অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী কবি শামস আল মইন, কবি ও কথাসাহিত্যিক রানা মাসুদ, কবি ও প্রাবন্ধিক খৈয়াম কাদের, সাহিত্যসমালোচক আনোয়ার মল্লিক, কবি ইসলাম রফিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুশান্ত চন্দ্র খান।
কবিতা পাঠ ও আলোচনার অংশে বক্তব্য রাখেন, কবি মাহাবুবা লাভীন, কবি মোহিত মিঠু, কামরুননাহার রেনু, কবি হিরণ্য হারুণ, কবি মীর রবি, কবি আল আমিন ইসলাম, কবি হোসেন রওশন, হাসনাইন রাব্বি, খেয়ালি মোস্তফা, মোজাম্মেল হক, তনু আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক সাকিল মাসুদ।
অনুষ্ঠানটি বৈশাখী কবিতা আড্ডা শিরোনামে শুরু হলেও এর আলোচনার ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে যায় পশ্চিমা সাহিত্য পর্যন্ত। আলোচনায় শামস আল মইন বাংলা এবং পশ্চিমা সাহিত্যের তুলনামূলক আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলা কবিতা এখনও আন্তর্জাতিক সাহিত্যের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। চিত্রকল্প ও আঙ্গিকের বিকাশে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।”
রানা মাসুদ কবিতার নান্দনিকতার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “বর্তমান কবিতার অনেক ক্ষেত্রে চিত্রকল্পের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে কবিদের আরও গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।”
খৈয়াম কাদের কবিতার তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে বক্তব্যে বলেন, “আমাদের সাহিত্য খুবই সমৃদ্ধ। প্রবাসী দোভাষীরা এগিয়ে আসলে তা আন্তর্জাতিক পরিসরে পৌঁছাবে।”
আনোয়ার মল্লিক কবিতার প্রাসঙ্গিকতা আলোচনায় শামস আল মইনের কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন, তিনি বলেন, “শামস আল মইনের কবিতায় প্রবাস জীবনের বাস্তবতা থাকলেও তিনি দেশ ও মাটির অনুভবকে ভুলে যাননি, যা তার কবিতাকে বিশেষভাবে অনন্য করে তোলে।”
কবি ইসলাম রফিক কবিতা প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, কবিদের সাহিত্যচর্চায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সংগঠন চর্চা। এ জন্য কবিকে সাংগঠনিক দায়িত্বের বাইরে থাকা উচিত। কারণ কবিরা যখন সংগঠনকে গুরুত্ব দেয়, তখন তাদের কাব্যস্রোত আলোচনার বাহির দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অনুষ্ঠানটি স্থানীয় সাহিত্যানুরাগী ও কবিদের মিলনমেলায় রূপ নেয় এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্য, পরিবেশ ও ইতিহাসচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশা প্রকাশ করা হয়।