দেশে বড় বড় দালান-কোটা তৈরির মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে নদী, বন, পাহাড়, জলাশয়; নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
এতে ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না। প্রকৃতিকে রক্ষা না করলে কখনোই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষে ‘আমাদের কৃষি, প্রকৃতি, জলাভূমির সুরক্ষা এবং নদী দখলদারী প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।
নিজেরা করির সমন্বয়কারী ও এএলআরডির চেয়ারপার্সন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। প্যানেল আলোচক ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। অথচ আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নদী ও জলাশয় নিয়ে ভাবতে হবে। ডেল্টা প্ল্যান কার্যকর করতে হবে। তা না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা যাবে না।
নদী, পানি ও পরিবেশ নিয়ে যেসব আইন আছে, কোনটার সঙ্গে কোনটা সাংঘর্ষিক নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আইনে সব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরও কেন পরিবেশ, প্রকৃতি রক্ষা করা যাচ্ছে না? কারণ আমাদের স্বচ্ছতার অভাব আছে। দেশকে রক্ষা করতে হলে সব প্রতিষ্ঠানে ভালো মানুষ দিতে হবে।
এ সময় তিনি নদী রক্ষা কমিশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা বড় বড় বিল্ডিং ও অবকাঠামো তৈরি করছি। কিন্তু এগুলো তৈরি করতে গিয়ে যে জলাশয়, বনভূমি আমরা হারাচ্ছি তা কখনো টাকার অংকে বিচার করি না। ফলে উন্নয়ন ও পরিবেশকে প্রায়ই মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়। নদী ও জলাশয়কে কেন্দ্র করে যে উন্নয়ন সম্ভব তা হচ্ছে না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ না করল টেকসই উন্নয়ন কখনো হবে না।
তিনি আরও বলেন, নদী রক্ষা কমিশন তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করছে না। আমারা নতুন করে নদী ও জলাশয় সৃষ্টি করতে পারব না। সুতরাং যেটা সৃষ্টি করতে পারব না, সেটা ধ্বংস করা উচিত না।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, দখলদাররা শুধু নদ-নদীই দখল করেনি, বরং নদী রক্ষা কমিশনকেও দখল করে ফেলেছে। আমাদেরকে নদ-নদী ও জলাশয় নিয়ে তুষ্টির বৃত্ত থেকে বের হয়ে সমস্যা-সংকটগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির বলেন, আমাদের নদী, জলাশয়, জলাধার, বন, পাহাড়, প্রকৃতি, দেশ, মানুষ সবাইকে বাঁচাতে হবে। এ জন্য সম্মিলিতভাবে লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নেই।