কালীগঞ্জে শর্ত ভঙ্গ করে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া
সুমন খান/ লালমনিরহাট/ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ১৭ শর্তে কথিত ‘পৌষ মেলার’ নামে পাওয়া
অনুমতির অধিকাংশ শর্ত ভঙ্গ করে কথিত সার্কাসে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসরে প্রায় অর্ধকোটি লেনদেন
হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এয়াড়াও অতিরিক্ত সাউন্ড, জুয়া ও অশ্লীলতাসহ অসামাজিক নানা কর্মকান্ডে
অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। কিন্তু আয়োজক কমিটির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলছেন না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মেলার নামে মূলত অশ্লীল নৃত্য, মদ ও জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। এই জুয়ায়
প্রতিরাতে লেনদেন হচ্ছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। আর এসব করা হচ্ছে টাকার বিনিময়ে অনেকের মুখ বন্ধ করে।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের তালুক বাণীনগরে দলগ্রাম-শান্তিগঞ্জ সড়কের পাশে চলছে এ মেলা।
তালুক বাণীনগর ইজিবাইক সমবায় সমিতি নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপি পৌষ মেলা
এই মেলায় ছোটখাট কয়েকটি খাবার ও দুটি কসমেটিক্সের দোকান ছাড়া তেমন কিছু নেই। তবে চলছে ‘দি নিউ লাকি সেভেন সার্কাস’।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত মাসব্যাপি পৌষ মেলায় সার্কাস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,
নাগরদোলা, জাদুখেলা, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল খেলা প্রদর্শনীর জন্য অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। অনুমতির শর্তে বলা হয়েছে,
সার্কাসে সুস্থ বিনোদনসহ প্রতিদিনের কার্যক্রম রাত নয়টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া আয়োজন করা যাবে না।
উচ্চ আওয়াজে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাদক কেনাবেচা বা
ব্যবহার নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে অনুমতির শর্তগুলোতে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালুক বাণীনগরে ধান চাষ হয় এমন জমিতে এবার চারা রোপন বন্ধ রেখে
এর মালিকদের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে কথিত এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে দোকান রয়েছে মাত্র ১০টি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দি নিউ লাকি সেভেন সার্কাস পেশাদার কোনো সার্কাস দল নয়। কথিত
এই সার্কাসের প্রতিটি শোতে এক ঘন্টারও কম সময় দেখানো হয় খেলাধুলা। বাকি সময় চলে নাচ-গান।
অনুমতির শর্তানুযায়ী রাত নয়টার কার্যক্রম শেষ করার কথা বলা হলেও রাতের শো শুরু হয় দশটার দিকে।
রাতে কূরুচিপূর্ণ নাচ দেখতে দর্শকে ভরা পুরো প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের পেছনে দুই পাশে বসানো হয় দুটো ‘ডাবুর বোর্ড’। রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত এই জুয়া ও নৃত্য চলে ।
মেলা কমিটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রতি রাতে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জুয়ারিদের
একটি দলকে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ডাবু নামের জুয়া পরিচালনার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়। আর নির্বিঘেœ জুয়া
পরিচালনার জন্য আয়োজক কমিটি পুলিশ, প্রশাসন, কতিপয় সাংবাদিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয়
নেতকর্মীকে ‘মাসোহারা’ দিয়ে থাকে। সূত্র মতে, দুটি জুয়ার বোর্ডে প্রতিরাতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, বানীগরের কোথায় সার্কাস হচ্ছে আমার জানা নেই।
আমি খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব ।
এ বিষয় জানতে জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, সার্কাসে পাশাপাশি অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া চলছে কিনা তা
আমার জানা নেই। যদি শর্তেও বাহিরে সার্কাস অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া চালালে অব্যশই বন্ধ করে দেয়া হবে।