সংবাদ নাকি আতঙ্ক? মিডিয়ায় বিভৎস ছবির বাড়বাড়ন্ত

৪ মার্চ ২০২৫, দুপুর ৪:৩০ সময়
Share Tweet Pin it
[সংবাদ নাকি আতঙ্ক? মিডিয়ায় বিভৎস ছবির বাড়বাড়ন্ত]

বাংলাদেশের মিডিয়া, বিশেষ করে সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে বিভৎস ছবি বা রক্তাক্ত ছবির সংখ্যা বাড়ছে, যা গভীর সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব ফেলছে। এসব ছবি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য মিডিয়াগুলির একটি জনপ্রিয় উপায় হয়ে উঠেছে। কিন্তু, এর পেছনে আছে এমন কিছু কারণ যা শুধুমাত্র দৃষ্টির আনন্দ নয়, বরং মানুষের মানসিকতা ও সামাজিক সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিভৎস ছবি ও রক্তাক্ত ছবির মূল কারণ:

১. বাণিজ্যিক উদ্বুদ্ধতা

মিডিয়া চ্যানেলগুলো সবসময় তাদের পুঁজির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে। আর এই উদ্দেশ্যে তারা এমন বিষয়বস্তু প্রকাশ করে যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। রক্তাক্ত এবং বিভৎস ছবি মানুষের মনোযোগ দ্রুত আকর্ষণ করে, যেহেতু এই ধরনের ছবি বিশেষত বিভ্রান্তিকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ হয়। এই ছবিগুলোর মাধ্যমে তারা বিজ্ঞাপন বা অন্যান্য প্রচারণা কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ট্র্যাজিক ঘটনা বা দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার মাধ্যমে টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) বাড়ানো হয় এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়

 

এই ধরনের ছবি শুধু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মুনাফা বাড়ায় না, বরং এটি সমাজে পেশাদারিত্বের অভাব সৃষ্টি করতে পারে। একদিকে, এটি খবরের সঠিকতা বা সার্বিক মূল্যায়নকে উপেক্ষা করে, অন্যদিকে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে  

২. মানসিক প্রভাব এবং সেনসেশনালিজম

বর্তমান সমাজে সেলিব্রেটি সংস্কৃতি এবং "সেন্সেশনালিজম" প্রবণতা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেনসেশনালিজম বলতে এক ধরনের উত্তেজনা বা হইচই সৃষ্টি করা হয়, যাতে মানুষকে অবাক বা বিস্মিত করা যায়। মিডিয়াতে কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধের রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করার মাধ্যমে এই ধরনের উত্তেজনা তৈরি করা হয়। জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করতে, মিডিয়া এসব ঘটনার ছবি এমনভাবে উপস্থাপন করে যা একদিকে মানবিক সহানুভূতির সঙ্গে যুক্ত, অন্যদিকে তা দর্শকদের মানসিকতায় অবিশ্বাস্য বা মর্মান্তিক আঘাত সৃষ্টি করে

 

এ ধরনের ছবি মানুষের মনে এক ধরনের অবসাদ বা শক তৈরি করতে পারে, যার ফলে তারা এসব ঘটনার দিকে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে, এটি সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে এবং অনেকে এর প্রতি এক ধরনের আবেগগত আসক্তিতে পরিণত হয়, যা শেষ পর্যন্ত এক ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা সৃষ্টি করে