তীব্র গরমে এক পশলা বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয়। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে ঝড় বা বৃষ্টি ছাড়াও বজ্রপাত খুব সাধারণ এক ঘটনা। গ্রীষ্ম-বর্ষায় আকাশে মেঘ জমলেই শুরু হয় গুরু ডাক। মেঘ আরেকটু ঘনিয়ে এলে শুরু হয় বজ্রপাত।
মেঘ থেকে ভূমিতে ধাবিত বজ্রপাত মানুষ ও সম্পদের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ুমণ্ডলে শক্তি বা এনার্জির পুনর্বিন্যাসে ঝড় ও বজ্রপাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এ ধরনের বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ পৃথিবীর তাপ পরিস্থিতিকে একটি সুষম বা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখে। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের ব্যাপ্তি অনেক এলাকাজুড়ে হয়, কিন্তু বজ্রপাত নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। আবার দিনের সব সময় বজ্রপাত হয় না, অর্থাৎ এটা সংঘটনের স্থান ও কাল জানলে হতাহতের সংখ্যা বহুলাংশে কমানো সম্ভব। আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যান। তবে সতর্ক থাকলে বজ্রপাতের মতো দুর্ঘটনার হাত থেকেও বাঁচা সম্ভব।
আবহাওয়াবিদের মতে, যখন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত-ভারি বর্ষণ-শিলাবৃষ্টি-দমকা-ঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে। বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ার সময় আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।
যদি কেউ খালি মাঠে বা পানির পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সমতল ভূমির তুলনায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির উচ্চতা বেশি হওয়ায় সে সরাসরি বজ্রপাতের শিকার হতে পারে। এমন প্রাণহানিকে সরাসরি আঘাত বলা হয়। অন্যদিকে কেউ যদি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন মুঠোফোনে কথা বলে বা কম্পিউটারে কাজ করে অথবা টিনের ঘরে টিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে থাকে, তবে বজ্রপাত থেকে নির্গত অতিরিক্ত ভোল্টেজের সংস্পর্শে মৃত্যুবরণ করতে পারে সে। শস্য বপন বা আহরণের কাজে মানুষ মূলত দুই পা আড়াআড়ি করে সারিবদ্ধ অবস্থায় জমিতে কাজ করে। তাঁরা স্টেপ ভোল্টেজের কারণে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।
যেভাবে রক্ষা পাবেন
যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতে বিপদাপন্ন পরিমাপের একটা জনপ্রিয় পদ্ধতির নাম ৩০-৩০ বা ‘৩০ সেকেন্ড ৩০ মিনিট’।৩০ সেকেন্ড: বজ্রপাত দেখা ও শোনার সময় থেকে ৩০ সেকেন্ড গুনতে হবে। যদি দুটির মধ্যকার সময় ৩০ সেকেন্ডের কম হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। অথবা আপনি যদি বজ্রঝড়ের শব্দ শুনতে পান, তবে নিরাপদ স্থানের সন্ধান করা সবচেয়ে নিরাপদ। কেননা, বজ্রপাত সাধারণত ঝড়ের সময় বা পরপরই হয়ে থাকে।৩০ মিনিট: বজ্রঝড়ের শেষ শব্দ শোনার পর থেকে ৩০ মিনিট নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে। নয়তো বজ্রপাতে মৃত্যু বা জখমের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বা সতর্কতা অত্যাবশ্যক।আ