সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী | Rangpur24
  1. [email protected] : Live Rangpur :
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম

সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী

  • Update Time : বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৫৮ Time View
সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী
সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মিঠাই মনসুরী

নীলফামারীর সৈয়দপুরের হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় মনসুরী মিঠাই। বেসন, ছোলার ডাল আর চিনি দিয়ে বানানো এই মিষ্টি সংরক্ষণ করা যায় বেশ কয়েক দিন। মুখে দিলেই চূড় চূড় হয়ে ভেঙ্গে যায়। আহা! কী দারুণ স্বাদ। যেন মধুর মতো।

মোগল আমলের এ মনসুরি শহরের আনাচে-কানাচে শতাধিক রেস্তোরাঁয় ময়রারা তৈরি হয়। শহরের গোলাহাট রেলকলোনির বাসিন্দা মো. ভোলা। বংশ পরম্পরায় তিনি মনসুরি মিঠাইয়ের কারিগর। ব্যাপক জনপ্রিয় সৈয়দপুরে।

বৃদ্ধ ভোলা ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বিহারী অধ্যুষিত জনপদ সৈয়দপুরে চলে আসেন। ভারতের বিহার রাজ্যের মুঙ্গের জেলার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। তিনি দাবি করেন, সৈয়দপুরে তিনিই প্রথম মনসুরি মিঠাই বানিয়েছেন। দিরে দিরে তা এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

ভোলা বলেন, মনসুরি মিঠাই বানাতে প্রয়োজন হয় সয়াবিন তেল, চিনি, বেসন ও ছোলার ডাল। প্রথম প্রথম যখন মনসুরি মিঠাই বানাতাম তখন কিন্তু সয়াবিন তেল ব্যবহার হতো না। খাঁটি ঘি দিয়ে তৈরি হতো মনসুরি মিঠাই।

আরেক কারিগর আব্দুল জলিল জানান, আমি হোটেলের কারিগর। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাড়িতে মনসুরি মিঠাই তৈরি করে সৈয়দপুর ও আশেপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি করে আসছি। এ মিষ্টিটি সবার কাছে খুব প্রিয়।

সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অবস্থিত দিলকুশা মিষ্টি ভাণ্ডার। পাকিস্তান আমলে ওই রেস্তোরাঁটির নাম ছিল দিলকুশা সুইটমিট। এর মালিক কামরানও এসেছিলেন বিহার থেকে। তার রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি মনসুরী মিঠাই তৈরি হতো। ২০০৪ সালে মালিক কামরুদ্দিন মারা যান। এরপর ওই মিষ্টির দোকান পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে মালিকের একমাত্র ছেলে মো. কাওসারের ওপর।

মিষ্টি ব্যবসায়ী কাওসার বলেন, যতদূর জেনেছি মনসুরি মিঠাই প্রথম দিল্লীতে তৈরি হয়। মোগল সালতানাতে স্বাস্থ্যকর ওই মিষ্টান্নটি পরিবেশন করা হতো। ময়রারা খুব যত্নে করে মনসুরী বানাতেন। আফগানিস্তানের কাবুলের একজন ময়রার নাম ছিল মনসুর পাঠান। সেই মনসুরের নামে মিষ্টির নাম হয়ে যায় মনসুর বা মনসুরি। তবে এ নিয়ে ভিন্নমত আছে বলে জানান তিনি।

অনেকের মতে, মিষ্টিতে আছে মন চুরি করার মতো স্বাদ। তাই এর নাম মনসুরী। যার অপভ্রংশ মনসুরী মিঠাই।

সৈয়দপুর পাহলয়ান সুইটসের স্বত্বাধিকারী সখেন ঘোষ বলেন, মনসুরি মিঠাই মূলত সস্তা দামের মিষ্টি। সয়াবিনসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়লেও মনসুরী বিক্রি হয় ২২০ কেজি দরে। আমরা কম দামের ওই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিটির উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছি। এখনও সৈয়দপুরে শতাধিক রেস্তোরাঁয় কমপক্ষে ১০০ মণ মনসুরি তৈরি হয়।

স্থানীয়ভাবে তো বেচাকেনা আছে, এরপরও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা নিজেদের রেস্তোরাঁয় মনসুরি কিনে নিয়ে যান। রাজধানী, ঢাকাতেও যাচ্ছে আমাদের মনসুরি মিঠাই।

সৈয়দপুর শহরের দিলশাদ হোটেল, সিরাজ হোটেল, জিআরপি ক্যান্টিন, বনফুল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, নাটোর দই ঘরসহ ফুটপাথ ও রেললাইনের পাশে গড়ে উঠা চা-মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রতিদিন মনসুরি মিঠাই তৈরি হয়। যেকোনো উৎসবে মনসুরি মিঠাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বিয়ে বাড়িতে মনসুরি মিঠাই থাকা চাই চাই।

সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, সৈয়দপুরের ঐতিহ্য মনসুরী মিঠাই টিকিয়ে রেখেছেন হোটেল মালিক ও কারিগররা। দারুণ স্বাদের এই মিষ্টি আত্মীয়-স্বজন কিংবা কেউ সৈয়দপুরে কেউ বেড়াতে আসলে সঙ্গে করে নিয়ে যান। বাঙালি-বিহারী অধ্যুষিত সৈয়দপুরে বিয়ে বাড়িতে কিংবা মিলাদ মাহফিলে মনসুরির কদর থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনে কারিগরদের সহযোগিতা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী মনসুরি মিঠাইটি টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © Rangpur24.com 0176414680 [email protected]