মুদ্রা সংগ্রহের রোমাঞ্চকর পৃথিবী: ইতিহাস এবং ব্যক্তিগত আবেগের যাত্রা

১৫ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১:১১ সময়
Share Tweet Pin it

 

A person with a white beard

Description automatically generated

 

মুদ্রা কেবলমাত্র একটি অর্থনৈতিক মাধ্যম নয়, এটি ইতিহাস, শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রতীক। প্রতিটি মুদ্রার পেছনে একটি গল্প থাকে, যা অনেক সময় কেবল মূল্য বিনিময়ের সীমানা অতিক্রম করে যায়। মুদ্রা সংগ্রহের জগতে প্রবেশ করা মানে একটি সময়ের যাত্রা, যা সভ্যতার উত্থান-পতন, সাম্রাজ্যগুলোর উত্থান ও পতন, এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলি বোঝায়, যা মানব সমাজকে গড়ে তুলেছে।





অতীতের একটি ঝলক: মুদ্রার ঐতিহাসিক গুরুত্ব

মুদ্রার ইতিহাস সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক। প্রাচীন লিডিয়া (আজকের তুরস্ক) অঞ্চলে প্রথম মুদ্রা মুদ্রিত হওয়ার সময় থেকে, ১৮৪০ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রাগুলি পর্যন্ত, এই ধাতব টুকরোগুলি তাদের সময়ের চিত্র আঁকে। মুদ্রা কেবল বাণিজ্যের উপকরণ ছিল না; এটি রাজত্ব, যুদ্ধ এবং অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যম ছিল। প্রতিটি চিহ্ন ও খোদাই করা নকশা সেই সময়ের সমাজিক-অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার এক টুকরো চিত্র।

 

উদাহরণস্বরূপ, ১৮৪০ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রাগুলি ভারতের এবং বৃহত্তর উপমহাদেশের ব্রিটিশ উপনিবেশের প্রভাব প্রতিফলিত করে। আজকে, এই মুদ্রাগুলি বিরল সংগ্রহযোগ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যা ইতিহাসের মন্ত্রমুগ্ধ করা ধ্বনি বহন করে ঔপনিবেশিকতার উত্থান, বাণিজ্যিক পরিবর্তন এবং অবশেষে স্বাধীনতার আন্দোলন।

 

মুদ্রা সংগ্রহ: একটি শখ যা আবেগে পরিণত হয়েছে

মুদ্রা সংগ্রহ কেবল একটি আর্থিক কাজ নয়; এটি ইতিহাস সংরক্ষণ, বিভিন্ন সংস্কৃতি বোঝা এবং ডিজাইনের শিল্পের প্রশংসা করা। আমার মুদ্রা এবং অন্যান্য সংগ্রহের প্রতি এই আবেগ ছোটবেলা থেকেই শুরু হয়েছিল। আমার সংগ্রহশালার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৯ সালে, এক গভীর ব্যক্তিগত মুহূর্তে। সেবছর আমার দাদা আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে যান। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে একটি মুদ্রা আমার হাতে আসেইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক ১৮৪০ সালে তৈরি এক রুপি মুদ্রা। আমরা তখন মুনশিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া গ্রামে বসবাস করতাম। সেই মুদ্রাটি আমার ইতিহাস জানার আগ্রহের বীজ রোপণ করে, যা একদিন আমার সংগ্রাহক জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। 


নিউমিসম্যাটিক্সের শিল্প এবং বিজ্ঞান

মুদ্রা সংগ্রহ শুধুমাত্র মুদ্রাগুলির সম্পর্কে নয়; এটি নিউমিসম্যাটিক্স (মুদ্রা ও মুদ্রাব্যবস্থার অধ্যয়ন) সম্পর্কে। মুদ্রার উপকরণ, খোদাইয়ের কৌশল এবং ডিজাইনের প্রতীকী অর্থ বোঝার মধ্যে একটি বিশাল শিল্প এবং বিজ্ঞান রয়েছে। যেমন, মুদ্রার ধাতব উপাদান একটি যুগের অর্থনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু বলতে পারে স্বর্ণ, রৌপ্য বা তামার মতো মূল্যবান ধাতুর প্রাপ্যতা বা অভাব। এছাড়াও, ডিজাইনের মধ্যে রাজার প্রতিকৃতি থেকে শুরু করে প্রতীক নির্বাচন পর্যন্ত, সব কিছুই সেই সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শকে প্রতিফলিত করে। বর্তমানে, প্রযুক্তি মুদ্রা সংগ্রহের জগতে নতুন পরিবর্তন আনছে। ডিজিটাল মুদ্রা, ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির আবির্ভাব, নতুন যুগের মুদ্রা সংগ্রহের পথ খুলে দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত সংগ্রহের সঙ্গে আধুনিক উদ্ভাবনকে মিলিত করেছে।

 

সংগ্রহের প্রভাব ও যাত্রার চ্যালেঞ্জ

প্রথম মুদ্রাটি হাতে পাওয়ার মুহূর্তটি ছিল আমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এটি আমাকে ইতিহাসের প্রতি গভীর অনুরাগী করে তোলে। কিন্তু সংগ্রাহক হওয়ার এই যাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। দীর্ঘ ৫৬ বছরের সংগ্রহশালায় ছিল বহু ত্যাগ ও কঠিন মুহূর্ত।

চ্যালেঞ্জগুলো:

  • ভালো পোশাক বা বিলাসী জীবনের পরিবর্তে সামান্য সঞ্চয় সংগ্রহের পেছনে ব্যয় করেছি।

  • জাপানে ৩৮ বছরের প্রবাস জীবনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ ভ্রমণের সুযোগ ত্যাগ করেছি।

  • হোমলেস অবস্থায়ও সংগ্রহশালার প্রতি ভালোবাসা অটুট ছিল।

  • জীবনের বিভিন্ন সময়ে বেকারত্বের কষ্টেও সংগ্রহ ছেড়ে দিইনি। বরং এটি ছিল আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা।

  • ১৯৭১ সালের পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধও আমার সংগ্রহকে থামাতে পারেনি।

  • ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এর দুর্ভিক্ষ (খাদ্য সংকটকালে) ও আমার সংগ্রহশালার প্রতি আমার মনোযোগ অক্ষুণ্ন ছিল।

 

সংগ্রহের প্রসার: কৈশোর থেকে প্রবাস
কৈশোরের শুরু:

১৯৭৩ সালে আমরা কুমিল্লা সদরে চলে আসি। এখানেই স্থানীয় স্বর্ণকারদের দোকান থেকে পুরানো বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করার সুযোগ পাই। পাবলিক লাইব্রেরিতে মুদ্রা ও ডাকটিকিট সম্পর্কিত বই পড়ে জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়েছি।

ঢাকায় সংগ্রহের প্রসার:

১৯৮১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ ও গবেষণার সুযোগ পাই। ১৯৮৩ সালে কলকাতা ভ্রমণের সময় প্রথমবারের মতো প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহ করি। ১৯৮৫ সালে এক জার্মান পেন-ফ্রেন্ডের মাধ্যমে শত বছরের পুরোনো মুদ্রা ডাকযোগে পাই।

জাপানে সংগ্রহের নতুন অধ্যায়:

১৯৮৭ সালে জাপানে আসার পর আমার সংগ্রহশালার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। মায়ের কাছে গচ্ছিত সংগ্রহ ১৯৯৪ সালে তাঁর মৃত্যুর পর জাপানে নিয়ে আসি। প্রবাস জীবনে অনলাইন নিলাম এবং বৈশ্বিক সংযোগের মাধ্যমে আমার সংগ্রহ বহুগুণে সমৃদ্ধ হয়।

 

একটি ব্যক্তিগত যাত্রা: মুন্সিগঞ্জ থেকে জাপান

আমি যখন আমার মুদ্রা সংগ্রহের যাত্রা চিন্তা করি, তখন মনে পড়ে, এটি কিভাবে মুন্সিগঞ্জে একটি সাধারণ ১৮৪০ সালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুদ্রা দিয়ে শুরু হয়েছিল। বছরের পর বছর, এই শখ আমাকে জাপান পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, যেখানে আমি আমার সংগ্রহ আরও বড় করতে থাকি, এবং বিভিন্ন সময় ও দেশের বিরল মুদ্রা ও কাগুজেনোটগুলি সংগ্রহ করি। আজ, আমার সংগ্রহে বিভিন্ন অঞ্চলের এবং ঐতিহাসিক যুগের মুদ্রা ও কাগুজেনোটগুলি রয়েছে, প্রতিটি মুদ্রা ও কাগুজেনোট ইতিহাসের একটি মুহূর্তের সাক্ষী।

 

বিশেষ সংগ্রহ ও অর্জন

বাংলা ভাষায় মুদ্রা:A close up of a coin

Description automatically generated

আমার সংগ্রহের অন্যতম গর্বের অংশ হলো বাংলা ভাষায় খোদাই করা মুদ্রা "একপাই সিককা"। এটি শুধু লেনদেনের মাধ্যম নয়, আমাদের ভাষার ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের প্রতীক। বাংলা ভাষায় মুদ্রায় লেখা "একপাই সিককা " এর সূচনা ১৯৭১ সালের বহু পূর্বে হয়েছিল। বাংলায় মুদ্রায় লেখা প্রথম দেখা যায় ব্রিটিশ আমলে। মুদ্রায় বাংলা ভাষার ব্যবহার তখনকার সময়ে বাংলাভাষীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি অংশ ছিল। বিশেষ করে, মোগল আমলে বাংলা ভাষায় মুদ্রা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।



মুক্তিযুদ্ধ ও ব্যাংক নোট:A close up of a currency

Description automatically generated

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, দেশের নিজস্ব মুদ্রা চালু না হওয়া পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানের মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু মুদ্রার ওপর বাংলায় বা ইংরেজিতে নীল রঙের সিলমোহর দিয়ে "বাংলাদেশ" চিহ্নিত করা হয়। এটি ছিল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং আমার সংগ্রহের একটি বিশেষ অংশ। এসব নোট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার আর্থিক ব্যবস্থার সাক্ষী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

 






পাকিস্তানি মুদ্রায় বাংলা ভাষার ব্যবহার:

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভক্তির পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলা ভাষার মর্যাদা কমে যায়। পাকিস্তান মূলত উর্দু ভাষার দেশ হলেও, তাদের কিছু কাগুজে নোটে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন এবং বাংলাকে তাদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করতেন। রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের সমর্থন আদায়ের জন্যই পাকিস্তানের নোটে বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু হয়েছিল। তবে, এই ব্যবহার কখনোই বাংলা ভাষার প্রতি প্রকৃত সম্মানের প্রতিফলন ছিল না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, পাকিস্তানের সরকার তাদের অর্থনৈতিক নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে শুরু করেছিল, এবং সেই সময় ১৯৭২ সালে পাকিস্তানী নোটে বাংলা ব্যবহার করা হয়েছিল। এর পেছনে মূল কারণটি ছিল ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি।

A green and pink currency note

Description automatically generated

১. বাংলাদেশের প্রভাব: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত সংকটপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান সরকারের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক সংকট ছিল, কারণ পাকিস্তানের বৃহত্তর অংশ ছিল বাংলা ভাষাভাষী জনগণের দ্বারা গঠিত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, পাকিস্তানে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।


২.পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতির প্রতিফলন: ১৯৪৭ সালে ভারত-বিভাগের পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলেও, পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষা ছিল প্রধান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং পরেও বাংলা ভাষাভাষীদের প্রতি পাকিস্তানি সরকারের আচরণ এক ধরনের উপেক্ষা ছিল। তবে ১৯৭২ সালের নোটে বাংলা ব্যবহার পাকিস্তানী সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত গুরুত্বকে কিছুটা মেনে নেওয়ার এক উদ্যোগ ছিল।


৩. আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় চাপ: মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রতি সমর্থন ছিল প্রবল। আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল। তাই পাকিস্তান সরকার কিছুটা নীরবভাবে হলেও বাংলা ভাষাকে সম্মান প্রদর্শন করার জন্য ১৯৭২ সালে তাদের নোটে বাংলা ব্যবহার করেছিল। তবে, এই ব্যবহার ছিল প্রাথমিক এবং পরবর্তীতে অনেক সময় নোটে বাংলা ব্যবহার কমিয়ে আনা হয়। এটি ছিল পাকিস্তান সরকারের ভাষাগত এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি প্রতিফলন।



আন্তর্জাতিক সংযোগ:

ছাত্রজীবনে পেনফ্রেন্ডদের মাধ্যমে মুদ্রা ও নোট সংগ্রহ করেছি। প্রবাসে কাজের সুবাদে এবং অনলাইন নিলামের মাধ্যমে বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই সংগ্রহ বাড়িয়েছি।

 

সংগ্রহের ভাণ্ডার:

  • মুদ্রা: প্রাচীন মুদ্রা, স্মারক মুদ্রা, এরর কয়েন ও প্রুফ কয়েন।

  • নোট: প্রাচীন নোট, স্মারক নোট, এরর নোট, মিলিটারি নোট, ইমারজেন্সি নোট ও প্রুফ নোট।

  • ডাকটিকিট ও সরঞ্জামাদি: পুরোনো ডাকটিকিট, অদ্ভুত আকৃতির ডাকটিকেট, ফার্স্ট ডে কাভার।

 

সংগ্রহের মধ্যে বিশেষ অর্জন

সংগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বকে জানার সুযোগ পেয়েছি। এর ফলে ইতিহাস সম্পর্কে অল্প সময়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি, যেমন কবে কোন দেশ বিভক্ত হয়েছে বা কোন দেশের ইতিহাস কেমন।

 

ক্যাশলেস অর্থনীতি এবং সংগ্রহের ভবিষ্যৎ

বিশ্ব এখন ক্রমেই ডিজিটাল লেনদেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের দিকে এগোচ্ছে। কাগুজে নোট এবং ধাতব মুদ্রার ব্যবহার কমে গেলেও, সংগ্রাহকদের জন্য এগুলো চিরকালই অমূল্য থাকবে। বিনিময় প্রথার প্রাক্কালে মুদ্রার প্রয়োজন ছিল তীব্র। কিন্তু এখন ক্যাশলেস লেনদেনের ফলে এর ব্যবহার বিলুপ্তির পথে। তবুও, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম।

 

সংগ্রহশালার প্রচার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সংগ্রহের প্রচার:

  • ১৯৮১-১৯৮৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় আমার সংগ্রহ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

  • ২০১৫ সালে "প্রথম আলো" পত্রিকায় এবং ২০১৬ সালে জাপানের একটি অনলাইন পত্রিকায় আমার সংগ্রহ নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

  • সংগ্রহশালার প্রচারের জন্য www.coinbangla.jp নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি।

 

মুদ্রা সংগ্রহের ভবিষ্যৎA person looking at a magnifying glass

Description automatically generated

ভবিষ্যতে, মুদ্রা সংগ্রহের জগৎ আরও পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। ডিজিটাল মুদ্রা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির উত্থান, নিউমিসম্যাটিক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন একটি যুগের সূচনা করেছে। তবে, এসব পরিবর্তনের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মুদ্রাগুলি সবসময় সংগ্রাহকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করবে। একটি মুদ্রা হাতে নেওয়ার, তার ওজন এবং অনুভূতির মধ্যে একটি নৈকট্য রয়েছে যা ডিজিটাল উপস্থাপনা কখনই প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। মুদ্রা সংগ্রহ, সীমানাহীন এক আবেগ, যেটি ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তির সাথে সঙ্গতি রেখে আরও বিস্তৃত হবে, তবুও পুরোনো মুদ্রাগুলি তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং মান বজায় রাখবে।

 


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

জাদুঘরে রূপান্তর করার স্বপ্ন থাকলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি সম্ভব হয়নি। তবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সংগ্রহশালার ভবিষ্যৎ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি একটি বই লেখার পরিকল্পনা রয়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে সাহায্য করবে।



শেষ কথা

আমার সংগ্রহশালা শুধু ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির বিষয় নয়; এটি ইতিহাসের সংরক্ষণ এবং ঐতিহ্যের ধারক। সংগ্রাহক হিসেবে এই যাত্রা সহজ ছিল না। তবুও, সংগ্রহশালা আমাকে জীবনের প্রতিটি ধাপে অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানার একটি উৎস হয়ে থাকবে।



সংগ্রাহক ও গবেষকঃ
হক মোঃ ইমদাদুল
জাপান
coinbangla@gmail.com