বীরগঞ্জে সাদেকুল ইসলামের বাড়িতে আনন্দের বন্যা
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বিকাল ৬:২২ সময়
২০০৭সালে নিখোঁজ হন সাদেকুল ইসলাম। এরপর ২০১৫সালের ১১জুলাই হতে ২০২৪সালের ২৪ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় বছর ভারতের কোলকাতার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৪ডিসেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
১৭ বছর ধরে তার কোন সন্ধান না পেয়ে পরিবার ধরে নিয়েছিল সে আর জীবিত নেই। কিন্তু চলতি বছরে ৮ মাস পূর্বে বীরগঞ্জ থানার মাধ্যমে জানতে পারে সাদেকুল ইসলাম ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরপর থেকেই নিখোঁজ সাদেকুলের বাড়িতে বইতে শুরু করে আনন্দের ঢেউ।
অবশেষে দুই দেশের সরকারি-বেসরকারী প্রচেষ্টার ফলে গত ২৫ডিসেম্বর সাদেকুল ইসলাম তার নিজ জন্মভূমি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের দলুয়া গ্রামে ফিরে আসেন। ফিরে আসার সংবাদে তার বাড়ীতে বাড়তে থাকে আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী সহ গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়।
সাদেকুল ইসলামের বাবা মোঃ আকবর আলী একজন কৃষক এবং মা মোছাঃ সিদ্দিকা বেগম গৃহিণী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় সাদেকুল ইসলাম। ২০০০সালে পার্শ্ববর্তী জেলার ঠাকুরগাঁও বেগুনবাড়ি কোটাপাড়া গ্রামে বিয়ে করে সাদেকুল। বিয়ের পর বাড়ি আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তানের বাবা হন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পরিবারের সাথে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০০১ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি। দিন দিন বাড়তে থাকে তার এই সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী দুই বছরের সন্তানকে সাথে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায় বাবার বাড়ি। এ সময় তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে পরিবারের লোকজন। তাকে সারিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা।
এ ভাবে চলতে থাকার এক পর্যায়ে ২০০৭সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সাদেকুল ইসলাম। এরপর সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও সাদেকুলের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরপর মাস বছর পেরিয়ে যুগ গড়িয়ে যায়। অপেক্ষা করতে করতে আর জীবিত নেই এমনটি ধরে নিয়েছিল পরিবারের লোকজন। অবশেষে ১৭ বছর পর সবাইকে অবাক করে বাড়ি ফিরে আসায় পরিবারসহ এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মত মনে হয়েছে।
সাদেকুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হয়ে ভারতে যাওয়ার বিষয়টি তার মনে পড়ে না। তবে তিনি যখন কিছুটা সুস্থ হন তখন জানতে পারেন তিনি কলকাতায় একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে এখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হলে বাড়ীর ঠিকানা মনে পড়ে তার। এ সময় শুক্লা নামে হাসপাতালে কর্মকর্তার সাথে তার বেশ সখ্যতা করে ওঠে। তাকে বাংলাদেশে বাড়ির ঠিকানা জানালে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করেন।
সাদেকুলের বাবা মোঃ আকবর আলী জানান, ছেলে খুব একটা মেধাবী না থাকায় চতুর্থ শ্রেণীতে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে তার সাথে সংসারের কাজে যোগ দেয়। এরপর বিয়ে করে সংসারে বেশ ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার পর সে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তার কোন কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম সে আর বেচে নেই। ১৭ বছর পর শুক্লা এবং অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমানসহ সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। যার মৃতদেহ র্ফিরে পাওয়ার আশায় ছিলাম তাকে আজ সুস্থ ফিরে পাওয়ায় এই পৃথিবীটা আমার কাছে নতুন মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।
সাদেকুলের ছোট ভাই আজিজুল হক জানান, ভাইকে ফিরে অনুভূতিটা কেমন ছিল সেটি বলে প্রকাশ করা যাবে না। তাকে ফিরে পেয়ে জড়িয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। এই কান্না কোন শোকের ছিল না। ভাইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের কান্না। সে ফিরে আসায় বাড়িতে এখন আনন্দের বন্যা বইছে।
তার বাল্যবন্ধু মোঃ আব্দুল খালেক জানান, সাদেকুল ছোটবেলা থেকে খুব পরিশ্রমী ছিল। বিদ্যালয়ে এক সাথে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। সংসারের সব কাজে বাবা মাকে সহযোগিতা করতেন। সে নিখোঁজের পর তাকে খুব মনে পড়ত। আজ তাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে মন ভরে উঠেছে। তার পুনর্বাসনের জন্য সরকারী-বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজের সকলের কাছে তিনি দাবি জানাই।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন পেলে বিধি মোতাবেক সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার জন্য পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।