ধর্ষণের অভিযোগের বিচার না করার অজুহাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন নেত্রকোনার এক নারী। গত এক সপ্তাহ ধরে ওই নারী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ মামলার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে থানায় মামলা হলে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। অভিযুক্ত হাবিব পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়ার কামরুল ইসলাম সাজুর সাথে ঢাকায় নেত্রকোনার আটপাড়া থানার শ্রীরামপুর গ্রামের ওই নারীর পরিচয়ের সূত্র ধরে বিয়ে হয়। এরপর থেকে তারা ঢাকায় অবস্থান করেন। গত ঈদুল আযহার এক সপ্তাহ আগে ওই নারী স্বামীকে খোঁজার উদ্দেশ্যে সুন্দরগঞ্জে আসেন। স্থানীয় কিছু সংখ্যক অপরিচিত ব্যক্তি ওই নারীকে তার স্বামীর বাসার ঠিকানা খুঁজে বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাতে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। পরদিন দিবাগত রাতে স্থানীয় কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তাকে কাউন্সিলর হাবিরের নিকট নিয়ে আসে। হাবিব ওই নারীর বক্তব্য শুনে তাকে থানা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশ বিষয়টি আমলে না নিয়ে ওই নারীকে ঢাকায় ফিরে যেতে বলে। ওই নারী ঢাকায় ফিরে না গিয়ে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করান। ইউএনও উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানকে বিষয়টি তদন্ত করে মীমাংসা করে দেয়ার দায়িত্ব দেন।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে ছালমা ওই নারীর স্বামী সাজুকে ডেকে এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত এম এ আজিজ, তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম রেজা ওই নারীর অভিযোগসমূহ মীমাংসা করে স্বামীসহ ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।
রহস্যজনক কারণে ওই নারী গত ২০ জুলাই গাইবান্ধায় এসে পুলিশ সুপারের কাছে কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে এজাহার দেয়। পুলিশ সুপার সুন্দরগঞ্জ থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা করার পরামর্শ দেন। বেশ কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার পর অবশেষে সোমবার রাতে থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা রেকর্ড করা হয়।
ওই নারী জানান, কাউন্সিলরসহ আসামিরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ করেছে। তার একটি দামী মোবাইল ফোন কে বা কারা ছিনিয়ে নিয়েছে। এছাড়া তার স্বামী ঢাকার বাসা থেকে ফ্রিজসহ বেশকিছু দামী জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে এসেছে।
ওই নারীর স্বামী সাজু মিয়া জানান, সে একজন নষ্টা নারী। সে যেখানে যায়, সেখানেই নামী-দামী মানুষের মান-সম্মান নিয়ে খেলা করে। সে আমার অবাধ্য।
কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান জানান, আমার কাছে এসে ওই নারী ধর্ষণের বিচার চেয়েছিল। আমি বলে দিয়েছি, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার আমি করি না। থানায় যাও, এটাই আমার অপরাধ।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে ছালমা জানান, ওই নারীর কথাবার্তায় গড়মিল রয়েছে। সে কখন কী বলে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই। সে একেক সময় একেক কথা বলে।
পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ রেজা সরকার ডাবলু জানান, তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর হাবিব। আমার জানা মতে সে একজন শিক্ষিত ও ভদ্র কাউন্সিলর। তার মাধ্যমে এ ধরনের কাজ হবে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসবে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জানান, তদন্তের মাধ্যমে আসল সত্যটা বেরিয়ে আসবে আশা করছি।