বন্যা কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি
গাইবান্ধার সব কটি নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় একের পর এক ডুবছে উঠতি ফসলসহ নতুন নতুন গ্রাম। গত মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে পানির তীব্র স্রোতে ধসে গেছে দুটি সেতু। তবে উত্তরাঞ্চলের আরেক জেলা নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।মধ্যাঞ্চলের কুমিল্লার মুরাদনগর ও রাজবাড়ীতে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বগুড়ার ধুনটে গতকাল বুধবার যমুনার বানের পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে এক শিশু।
কাজিপুরে যমুনায় গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত) পাঁচ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপত্সীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বাড়ায় উপজেলার ৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। উপজেলায় পানিবন্দি এক হাজার ১৫০টি পরিবার। চরাঞ্চলে ছয়টি ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেটুয়া থেকে ডিগ্রি দোরতা পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপী দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। তেকানি থেকে রূপসা আট কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার তিন কিলোমিটার পানিতে ডুবে গেছে। রাস্তাটির মুজিব কেল্লার দক্ষিণে এবং কিনারবেড় মাদরাসাসংলগ্ন রাস্তায় মঙ্গলবার দুটি সেতু পানির তোড়ে ধসে যায়। ইউএনও জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, বানভাসির জন্য আজ থেকে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হবে।
তবে সিরাজগঞ্জের সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় যমুনার পানি স্থিতিশীল থাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান গতকাল জানান, বন্যায় কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের আট হাজার ৪৫৩টি পরিবারের ৪০ হাজার ৮১২ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ১৮৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হলেও মানুষ এখনো সেখানে ওঠেনি। এ পর্যন্ত ১৪০ মেট্রিক টন চাল ও তিন হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
গাইবান্ধা পাউবো সূত্র জানায়, বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বেড়ে বিপত্সীমার ৬০ সেমি এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপত্সীমার ৩৯ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় বন্যাকবলিত চার উপজেলার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান এবং ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের শিমুলবাড়ী সড়কের কালভার্টের কাছে গতকাল দুপুরে বন্যার পানিতে পড়ে শিশু আতিক হাসান (৭) নিখোঁজ হয়। সে উপজেলা গোসাইবাড়ী পূর্ব পাড়ার কমল হোসেনের ছেলে।
নীলফামারীর ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, বুধবার তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল বিকেল ৩টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি কমছে। আমার ইউনিয়নে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি ছিল। অর্ধেক বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে মানুষ ফের বন্যার আতঙ্কে। ’ ঝুনাগাছ চাপানী ইউপির চেয়ারম্যান মো. একরামুল হক বলেন, ‘ভেণ্ডাবাড়ী ও ছাতুনামা গ্রামে ৩০০ পরিবারের বাড়িতে এখনো পানি রয়েছে। ’
বন্যাকবলিতদের মধ্যে ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণের কাজ চলমান বলে জানান ডিমলার ইউএনও বেলায়েত হোসেন।
রাজবাড়ীতে প্রতিদিন পদ্মার পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে রাজবাড়ী পাউবোর হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার দৌলতদিয়া গেজ স্টেশন পয়েন্টে ১৪ সেমি পানি বেড়ে ৮.৪২ সেমি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়; কিন্তু আর ২৩ সেমি পানি বাড়লে বিপত্সীমা অতিক্রম করবে।