পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রঙের কাজ না দেওয়ায় ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার গোবিন্দগুরু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ওই বিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী তার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামনেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলাই চন্দ্র দাসকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ ঘটনায় বোদা থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ওই বিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে তারা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র সংস্কার কাজের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় প্রতিষ্ঠানটি। টাকা পাওয়ার পর সংস্কার কাজ শুরু হয়। এদিকে গত ১৪ জুন বিদ্যালয়ে সমঝোতায় নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়। রঙ মিস্ত্রী লিয়াকত আলী অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হন। বিদ্যালয়ের রঙের কাজটি তাকে দেওয়ার দাবি করেন লিয়াকত। ১৫ হাজার টাকায় কাজটি করে দিবেন বলেও জানান তিনি।
কিন্তু তার কাজের মান খারাপ হওয়ায় প্রধান শিক্ষক হিমেল ইসলাম নামে এক যুবককে রঙের কাজটি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন লিয়াকত। মঙ্গলবার সকালে রঙের কাজ করতে গেলে লিয়াকত আলী লোকজন নিয়ে গিয়ে তা বন্ধ করে দেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক বলাই চন্দ্র দাস প্রতিবাদ জানালে তাকে চড় থাপ্পর মারতে থাকেন লিয়াকত। পরে অন্য সহকর্মী ও স্থানীয়রা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনোরঞ্জন বর্মন বলেন, আমরা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় কয়েকজন লোক নিয়ে এসে লিয়াকত আলী কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রধান শিক্ষককে মারধর শুরু করেন। এখন আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ে এখন আমরা নিরাপদ নই।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমাদের সামনেই আমাদের হেড স্যারকে তারা মারধর করেছে। এই দৃশ্য দেখে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে স্যারকে লাঞ্ছিত করার বিচার দাবি করছি।
স্থানীয় অধিবাসী সন্তোষ কুমার রায় বলেন, একজন শিক্ষকের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনভাবেই আমরা মেনে নিতে পারি না। এ ঘটনায় আমরা পুরো এলাকাবাসী লজ্জিত। আমরা চাই এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব আলী বলেন, সামান্য ১৫ হাজার টাকার কাজ না দেয়ায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে মারধর করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী। আমরা কল্পনাই করতে পারছি না যে সামান্য কাজ না দেওয়ায় তিনি শিক্ষককে মারধর করতে পারেন। আমরা এ ঘটনায় পুরো শিক্ষক সমাজ বিস্মিত। আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যেন আর কেউ শিক্ষকদের সাথে এমন আচরণ করার সাহস না পায়।
ভুক্তভোগী শিক্ষক বলাই চন্দ্র দাস বলেন, সামান্য এই রঙের কাজ না দেয়ায় ম্যানেজিং কমিটির নতুন সদস্য লিয়াকত আলী লোকজন নিয়ে আমার উপর হামলা করেছে। সবার সামনেই আমাকে মারধর করেছে। আমরা তাদের সন্তানদেরকেই পড়াই। তাদের শিক্ষার ভালো পরিবেশ তৈরির জন্যই কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এমন আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনি। এ লজ্জা পুরো শিক্ষক সমাজের। আমি বোদা থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
বোদা থানার ওসি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ওই বিদ্যালয়ের ঘটনায় দুই পক্ষের দুটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, এ বিষয়ে আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষককে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে দেখছি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লিয়াকত আলী বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির কারো সাথে কোন পরামর্শ না নিয়েই নিজের মতো করে কাজ করছেন। এই বিষয়টি জিজ্ঞাসা করায় তিনি আমার উপর চড়াও হন। এ সময় একটু ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে এই আরকি। এখন তিনি বিষয়টিকে বাড়াচ্ছেন।