বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করবে জাতীয় পার্টি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বুধবার দলটির বনানীস্থ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টানা তিন মেয়াদের এই বিরোধী দল রাজনৈতিক করণীয় ঠিক করতে জরুরি বৈঠক আহ্বান করে। এতে সর্বশেষ নির্বাচিত ১১ এমপির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ছাড়া বাদবাকি বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা এ ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জবাবে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। মূলত বাধ্য হয়ে নির্বাচনে গিয়েছেন বলেও বৈঠকে উল্লেখ করেন তিনি।
বৈঠকে মূলত চারটি বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এগুলো হলো- দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, বিগত নির্বাচনে অংশ নেওয়া, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ না কি বিএনপির প্রতি সমর্থন দেবে এবং বর্তমান সরকারের প্রতি দলের অবস্থান।
জাপার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘আপাতত বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলের রাজনৈতিক মিত্র হতে চান না তারা। অন্তত আগামী তিন মাস পর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে চায় দলটি। বৈঠকে কেউ কেউ আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পরামর্শ দেন।
সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এখন জাপার ওপর কোনো চাপ নেই। বাধা নেই। তাই দল গোছানোর উপযুক্ত সময় এখন। আমাদের সবাইকে মাঠে নেমে দল গোছাতে হবে। যে যার অবস্থান থেকে এ কাজে নামার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে আমরা জাপাকে সারাদেশে শক্তিশালী করতে পারলে ফলাফল ভালো হবে।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বর্তমান সরকার কমপক্ষে দুই বছর থাকতে পারে বলেও ধারণাপ্রসূত আলোচনা হয়েছে। এই সময়ে জাপাকে শক্তিশালী করতে বিভাগীয় কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যন্ত কাজ করার পরামর্শ দেন অনেকেই। এ ছাড়া বর্তমান সরকারকে জাপার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ বছরের বেশি সময়ে দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ভুল নিয়ে সমালোচনা করেন অনেকেই। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুর জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ সহ দল প্রধানের ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে প্রশংসা করেন কেউ কেউ।
দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তরুণদের যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে নেতারা বলেন, তরুণরা দলে না আসলে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যেতে পারবে না। এজন্য তরুণরা এগিয়ে আসবে এরকম চিন্তা ও কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ দেন বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সাথে রাজধানীতে অবস্থারত পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ অংশ নেন। সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি নেতারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। একইসাথে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও করনীয় নিয়েও আলোচনা করেন।
সভায় নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয় ,বর্তমান সরকারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে জাতীয় পার্টি।
বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, এডভোকেট সালমা ইসলাম। প্রেসিডিয়াম সদস্য – গোলাম কিবরিয়া টিপু, সোলায়মান আলম শেঠ, আব্দুর রশিদ সরকার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী অব., এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দ দিদার বখত, নাজমা আক্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, মো. জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, শেরীফা কাদের, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা-মনিরুল ইসলাম মিলন, ড. নূরুল আজহার শামীম, খান মো. ইসরাফিল খোকন,ইন্জিনিয়ার সিরাজুল হক, সরদার শাহজাহান, নূরুল ইসলাম তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন প্রমুখ।