গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা বাজার মোড়ে এরা প্রতিদিনই দলবেঁধে আসেন। শ্রম বিক্রির জন্য বসে থাকেন ক্রেতার অপেক্ষায়।
তিস্তা বাজার মোড় আসলে শ্রম কেনা-বেচার হাট। এ হাটে ভোরবেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে। শ্রমজীবীরা অপেক্ষায় থাকেন। ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে নিজ নিজ কাজের জন্য যান তাদের।
দেখা যায়, এই শ্রমের হাটে কেউ আসছেন সাইকেলযোগে, কেউ হেঁটে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এসব মানুষের কারও কাছে আছে কোঁদাল, কেউ এনেছেন পাসুন বা নিড়ানি, কারও কাছে ডালি কিংবা কারও হাতে কাস্তে। এসব যন্ত্রপাতিই চিনিয়ে দেয় এদের। খরিদ্দার এসে পছন্দ মতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেন এরা। আর এভাবে নিজেকে বিক্রি করতে পারলে তবেই তাদের পরিবারের খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোরবেলা ওইস্থানে শ্রমজীবীদের এ হাট বসে। চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। কৃষি ও ভবন নির্মাণ শ্রমিকেরা আসেন এখানে। দিন চুক্তিতে তাদের কিনতে আসেন বেলকা, তারাপুর, হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, দহবন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থরা। দরদাম ঠিক হওয়ামাত্র শ্রমিকেরা রওনা হন মালিকের কাজে। দিন শেষে মজুরি বুঝে পেলে এখান দিয়েই ফেরেন বাড়ি। সঙ্গে কিছু টাকা এবং সদাই। এরপর আরও একটি ভোরের অপেক্ষা।
শ্রমিক কোরবান আলী ও দুলাল মিয়া জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খরচের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে স্ত্রী। কী কী বাজার করতে হবে, তা-ও বলে দিয়েছে। এ জন্য তিস্তা বাজার মোড়ে তাদের বিক্রি হওয়াটা জরুরি।
আরেক শ্রমিক নজিম উদ্দিন বলেন, নিজেকে বিক্রি করতে না পারলে হাতে টাকা আসবে না। আর টাকা না এলে খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবে পুরো পরিবারের। তা ছাড়া, আছে ছেলের পড়াশোনার খরচ। সে কারণে এখানে নিজেকে বিক্রি করতে এখানে আসা।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় শ্রমজীবী সংগঠনের সভাপতি আকবর আলী বলেন, এ হাটে কাজের ধরন অনুসারে প্রতিদিনের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সঙ্গে দুপুরের খাবার। বৃষ্টি-বাদলের দিনে এই অসহায় মানুষগুলোর বসার কোনো জায়গা নেই। বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। তিস্তাবাজার মোড়ে তিনি এই শ্রমিকদের বসার জন্য একটি নিরাপদ জায়গার দরকার বলে জানান তিনি।