ছেলেকে নিয়োগ দিতে তোপের মুখে মাদরাসা সুপার
আরিফুল ইসলাম,প্রতিনিধি, চিলমারী কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত কাচারী হোসাইনিয়া নুর দাখিল মাদরাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ছেলেকে নিয়োগ দেয়ার ষড়যন্ত্র ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার সুপারের বিরুদ্ধে। মাদরাসা সভাপতি সুপারের আপন ভগ্নিপতি হওয়ায় যোগসাজশ করে তার ছেলে কে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করেছেন। এতে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ১৯ শে মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে স্থানীয় নাম সর্বস্ব দৈনিক এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সুপার। চক্রটি সেদিনের প্রকাশিত পত্রিকার বান্ডিল অভিনব কায়দায় একযোগে ক্রয় করে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রচারণা বন্ধ করে। পরে সভাপতির আপন ভাগ্নে ও মাদরাসা সুপারের ছেলে জাকিরুল ইসলামকে নিয়োগ দিতে চুপিসারে সকল প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে মাদরাসা সুপার ও সভাপতি। স্থানীয়রা জানান, মাদরাসায় নাকি শুন্য পদে লোক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু আমরা এলাকাবাসী হিসেবে কিছুই জানি না। মাদরাসায় কোন প্রকার নোটিশ বা স্থানীয় কোন ব্যক্তিকে অবগত করে নাই। পরে শুনেছি মাদরাসার জন্য একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই পদের জন্য সভাপতি এবং মাদরাসা সুপারের মনোনীত প্রার্থী ব্যতিত লোক দেখানো ৫জন প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ করা হয়। সুপারের ছেলেকে চূড়ান্ত করতেই এমন অপকৌশল ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগেও ঐ শিক্ষক সুপার হওয়ার সাথে সাথে কিছু দিনের মধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানে তার বড় ছেলেকে নিয়োগ দেন। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো সেই পদে তার ছোট ছেলেকে নিয়োগ দেয়ারা চেষ্ঠা চালাচ্ছে। এতে করে স্থানীয় শিক্ষিত বেকাররা কোন সুযোগ পাচ্ছে না। স্বজন প্রীতির মাধ্যমে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সভাপতি ও সুপার তাদের পছন্দের নিকটাত্মীয় একজন লোক নির্ধারণ করে রেখেছেন। অনিয়মের এমন চিত্র স্থানীয়দের নজরে এলে তারা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে নিয়ে আসেন। অবিলম্বে ওই সাজানো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল না করলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা জানান তারা। চাকরি প্রাত্যাশী এলাকার বেকার প্রার্থীরা জানাান, এ মাদরাসার কখন কোন নিয়োগ হয় আমরা স্থানীয় হয়েও জানতে পারি না। কোন প্রকার নোটিশ বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মাদরাসার নোটিশ বোর্ডে দেয়া হয় না। তাই আমরা বেকাররা কোন ধরনের সুযোগ পাই না। আর এ প্রতিষ্ঠানে আব্দুল লতিফ সুপারের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার নিকট আত্নীয় ছাড়া এখন পর্যন্ত স্থাণীয় কেউ আবেদন করার সুযোগ পায় নি। মাদরাসার জমিদাতার ছেলে ও ইউপি সদস্য মোঃ নুর আলম বলেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ নিয়োগ চূড়ান্ত করার পাঁয়তারা করছে কমিটির সভাপতি ও সুপারিনটেনডেন্ট। অফিস সহাকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যে ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই ব্যক্তি সভাপতির আপন ভাগ্নে ও সুপারের ছেলে। ১৪ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয়ার চুক্তি করেছেন। এর আগেও সুপার ৭০ লাখ টাকায় একাধিক জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। সুপারের বড় ছেলে অত্র মাদরাসায় চাকুরি করতেন। জেলা শহরের কাঠালবাড়িতে অবস্থিত নুরুল্লাহ ফাজিল মাদরাসায় এনটিআরসিএ’র সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় তার শূন্য পদে সুপার ছোট ছেলে জাকিরুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত করে এর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মাদরাসার সুপার মোঃ আব্দুল লতিফ আনসারী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা।
নিয়োগ পরীক্ষা এখনো সম্পন্ন করা হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ডিজির প্রতিনিধিকে প্রধান করে সবেমাত্র পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিজির প্রতিনিধি যাকে চূড়ান্ত করবেন তিনি নিয়োগ লাভ করবেন। আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ করার করুক। অভিযোগের বিষয়ে চিলমারী উপজেলা মাধ্যমিক মাধ্যমিক কর্মকর্তা মোঃ তাহের আলী জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। খুব শীগ্রই ইউএনও মহোদয়ের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শামছুল আলম বলেন, মাদরাসা বোর্ড স্বতন্ত্র হওয়ায় আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ কম। মাদরাসায় জনবল নিয়োগে অনিয়মের অনেক অভিযোগ। এখানে স্বচ্ছতা আসা জরুরি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য ইউএনওকে দায়িত্ব দিয়েছি কোনোভাবেই নিয়োগ বাণিজ্য করার সুযোগ নাই। যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে উক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে।