পঞ্চগড় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আসছে ভারতীয় আলু
প্রকাশ্যে দিবালোকে আসা এসব আলু পরে রপ্তানি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। আলু চোরাই পথে আমদানি হওয়ায় সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্ত এলাকায় কয়েকদিন ধরেই জমে উঠেছে ভারতীয় আলুর কারবার। স্থানীয় চোরাকারবারীদের মাধ্যমে এসব আলু কিনছেন বহিরাগত ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রোববার (২৬ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিচ্ছিন্নভাবে বিপুল সংখ্যক আলুর বস্তা সাজানো রয়েছে রাস্তার পাশের খালি মাঠে। সেখানে এসব আলু ট্রাকে লোড করার অপেক্ষায়। আবার কারো আলু লোড হচ্ছে ট্রাকে।
ভারতীয় জমি থেকে বস্তাভর্তি আলু বিভিন্নভাবে দেশের সীমানায় আনছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। সেখান থেকে ভ্যান বা পিকআপে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। কেউ কেউ ভারতীয় বস্তা বদলে এসব আলু ভরছেন অন্য বস্তায়। সব প্রস্তুতি শেষে তোলা হয় ট্রাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া, মমিনপাড়া, তিনঘড়িয়া পাড়া এবং বাঙ্গালপাড়া- এই চারটি গ্রামের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ভারতের কয়েকটি গ্রামের। ওই গ্রামগুলোর অবস্থান ভারতে হলেও তারকাটার বেড়া তাদের প্রতিবেশি গ্রামগুলো থেকে আলাদা করতে পারেনি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উভয় পাশের স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি জায়গাটি বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তারকাটার ওই পারের গ্রামগুলোতে চাষ হওয়া আলু প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারতে আলুর দাম কম হওয়ায় এমনটা করছেন চোরাকারবারিরা। মাত্র ৩ টাকা কেজিতে কেনা ভারতীয় আলু ১১ থেকে ১৩ টাকা দরে পাইকারি কিনছেন বহিরাগত ব্যবসায়ীরা। মজুরি, পরিবহণ খরচ আর বিভিন্নখানে ম্যানেজ করে এই কাজ করা হচ্ছে। আবার স্থানীয়দের অনেকেই দাবি করেছেন, সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশের জমিতে চাষ হয়েছে এসব আলু।
ফলে এই আলু বিক্রিও হবে কম দামে। এতে দেশের আলুর চাহিদা অনেকটাই কমে আসবে। ভারত থেকে অবৈধভাবে আলু আসার কারণে স্থানীয় কৃষকদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তারা।এদিকে, অবৈধভাবে আলু আসার বিষয়টি নজরে আনলে অভিযান চালায় বিজিবি। অভিযান চলাকালে তারা ৬৬ বস্তা আলু জব্দ করেন।
বিজিবি ঘাগড়া ক্যাম্পের সিপাহী কাজল মজুমদার বলেন, আমরা অভিযান চালিয়েছি। যাচাই বাছাই করে যেগুলো মালিকবিহীন এবং কোনো কাগজপত্র নেই এমন ৬৬ বস্তা আলু জব্দ করেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।বিজিবি ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার আনোয়ার হোসেন জানান, আলু চোরাকারবার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষেদের চেয়ারম্যান নূর-ই আলম জানান, যে আলু চোরাকারবারি হয়ে বাংলাদেশে আসছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেগুলো আসলে আমাদের এখানকার উৎপাদিত আলু।