সুমন খান লালমনিরহাট :মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে আজ নিঃস্ব আসফা বেগমের পরিবার। লালমনরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী খানের বাজারের পাশে ছোট দুচালা ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পেটের তাগিদে মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে দিন পার করছে আসফা বেগম।
টানা ৬ মাস ধরে শিকলে বাঁধা আসাদুজ্জামান। শিকলবন্দী হয়েই জীবনযাপন করছেন তিনি। নিরুপায় হয়ে মা- তার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছেন। এভাবেই কাটছে ৪৬ বছর বয়সী আসাদুজ্জামানের দিনরাত।
বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় অমানবিকভাবে জীবন কাটছে তার। তার শারীরিক অবস্থাও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। একমাত্র সন্তানের উন্নত চিকিৎসার জন্য দানশীল মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা চান অসহায় এই মা সহ স্থানীয়রা।
আসাদুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে আসাদুজ্জামান মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বসতবাড়ি, সহায়-সম্বল যা ছিল তা বিক্রি করে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। এখন অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করতে না পারায় ৬ মাস ধরে শিকল বন্দি করে রেখেছেন।
আাসাদুজ্জামাকে বাড়ির পাশে গাছের নিচে রাখা হয়েছে। শিকল পরা অবস্থায় সে খাবার খায়, রাতে ঘুমায় গাছতলায়।
মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে সংসার করে আসাদুজ্জামান। ৬ মেয়ে রয়েছে তার। এরমধ্যে মারধর করায় তার স্ত্রী হালিমা সংসার ছেড়ে চলে গেছে।
আসাদুজ্জামানের মা আসফা বেগম জানান, প্রায় ১২ বছর আগে তার ছেলে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। যাকে পায় তাকেই আঘাত করে। ৩ বার স্ত্রীর মাথা ফাটিয়েছে, মারধরও করেছে। বাদ যায়নি প্রতিবেশিরাও। তার নানা রকম তান্ডবে মানুষজন অতিষ্ঠ। ফলে নিরাপত্তার জন্য তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।
আসাদুজ্জামানের চাচাতো ভাই শ্যামল চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন আমার ভাই আজ পাগল। শিকলে বেধে রাখছি, এই অবস্থা চোখে দেখে সহ্য করতে পারিনা। ভাইয়ৈর চিকিৎসার জন্যা বসতভিটা বিক্রি করেছি।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, আসাদুজ্জামান সত্যিই মানসিক ভারসাম্যহীন। অমানবিক জীবনযাপন করছে সে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেনা তার পরিবার। তাই পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।
গড্ডিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, আসাদুজ্জামানের চিকিৎসার জন্য বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, বিষয়টি জানা ছিলনা। সমাজসেবা অধিদপ্তরে মানসিক রোগীর চিকিৎসা করানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কোন সুযোগ থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেন বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।