1. [email protected] : Live Rangpur :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫১ অপরাহ্ন

চিকিৎসকদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৬৩ Time View

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, চিকিৎসকদের সংখ্যা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে তারা কাজের চাপে থাকেন। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে, এটা থাকবেই। রাতারাতি দেশের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে না। তবে চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় কিছু জায়গায় আনসার মোতায়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব হাসপাতালেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী, দুই তৃতীয়াংশ হাসপাতালের এক্স-রেসহ সব মেশিনপত্র নষ্ট। এগুলোর দায় সিভিল সার্জন এবং ইউএইচএফপিওদের নিতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো হলে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশের জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে চিকিৎসকদের চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণার ফলাফল নিয়ে অবহিতকরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সোমবার বিকাল তিনটায় বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের মিলনায়তনে পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিজ বিভাগ এ অবহিতকরণ সভার আয়োজন করে।

বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান এ ফলাফল উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ নেবার জন্য একজন রোগী এক সঙ্গে চার পাঁচ বিভাগের চিকিৎসকের কাছে যান, এটির সমাধান করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উপজেলায় নারী পুরুষ চিকিৎসকদের সমতায়ন নিশ্চিতে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা যেতে পারে হবে চিকিৎসকদের পদোন্নতি অটোমেশন করতে হলে চিকিৎসকদের ৪টি ক্যাডার প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

গবেষণালব্ধ প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের বড়সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর নির্ভরশীল। এই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অন্তরায়। এ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করা গেলে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি কমিয়ে উন্নত সেবা দেয়ার পরিবেশ তৈরি সম্ভব বলে এতে জানানো হয়। এ গবেষণায় বাংলাদেশের নয়টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্ভে চেকলিস্টের মাধ্যমে হাসপাতালসমূহের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা সিভিল সার্জন বা সুপারিনটেনডেন্ট বা মেডিকেল অফিসার আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথা পর্যালোচনা করা হয়। এ গবেষণাটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তথ্য নেয়া হয়।

শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন মোটে থাকলেও শতকরা ৪১.২ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবাটি পাওয়া যায়নি। জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যথাক্রমে শতকরা ৮৮.৯ এবং ৪১.২ ভাগ ক্ষেত্রে এক্স-রে পরিষেবা পাওয়া গেছে। শতকরা ৮৮.৯ ভাগ জেলা হাসপাতাল এবং ৭৬.৫ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি পরিষেবা পাওয়া গেছে। শতকরা ৪৪.৪ ভাগ জেলা হাসপাতাল এবং ১১.৮ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম সুবিধা পাওয়া গেছে। শতকরা ৭৭.৮ ভাগ জেলা হাসপাতালে এবং শতকরা ৬৪.৭ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলা রোগীদের বা অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি। শতভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ডরমিটরি বা কোয়ার্টার সুবিধা থাকলেও জেলা হাসপাতালে এর উপস্থিতি শতভাগ ৪৪.৪ ভাগ। শতকরা ৫২.৯ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমিটরি বা কোয়ার্টার পাওয়া গেলেও জেলা হাসপাতালে এর পরিমাণ শতকরা শূন্য শতকরা ২০.০ ভাগ জেলা হাসপাতালে এবং শতকরা ১৭.৬ ভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমিটরি বা কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

অনুমোদিত পদের বিপরীতে শূন্য পদের চিত্র

জেলা হাসপাতালে শতকরা ৩০ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৬৩ ভাগ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে শতভাগ ৫১ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৭৭ ভাগ জুনিয়র বা সিনিয়র কনসালটেন্ট শূন্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে শতকরা ৬৫ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৩৮ ভাগ মেডিকেল অফিসার বা সহকারী সার্জন পদ শূন্য রয়েছে। নার্সিং স্টাফ বা মিডওয়াইফ পদের ক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে শতভাগ ১৫ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ২৫ ভাগ পদ শূন্য পাওয়া গেছে। জেলা হাসপাতালে শতকরা ৫১ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৪২ ভাগ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বা টেকনিশিয়ান পদ শূন্য পাওয়া। জেলা হাসপাতালে শতকরা ২০ ভাগ ক্লিনার পদ শূন্য থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য ক্লিনার পদের পরিমাণ শত ৬৬ ভাগ। জেলা হাসপাতালে শতকরা ৩১ ভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শতকরা ৫৩ ভাগ নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারের পদ শূন্য পাওয়া গেছে।

অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ

প্রয়োজনের তুলনায় কম, ছোট, পুরনো ও ঝুকিপূর্ণ সেবাকক্ষ, অপরিচ্ছন্ন টয়লেট এবং নিরাপদ পানির অভাব, অনুপযুক্ত হসপিটাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিকেল অফিসার বা ল্যারেটরি টেকনিশিয়ান বা সহায়ক কর্মী সংকট, অতিরিক্ত কাজের চাপ, সঠিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রযুক্তির অভাবকে অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিকিৎসকদের চিহ্নিত করেছেন। অন্যায় সুবিধাভোগীদের প্রভাব ও নিরাপত্তার অভাব সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ

কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতার অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ও প্রস্তাব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীর অবাঞ্চিত হস্তক্ষেপ কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সেবা প্রদানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়।

নীতি সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ

উচ্চ শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের সুযোগের অভাব, কর্মক্ষেত্রে বদলি বৈষম্য, অর্জিত জ্ঞান বাস্তবায়নে সুযোগের অভাব, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে বৈষম্য চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

পারিপার্শ্বিক পরিবেগত চ্যালেঞ্জ

জীর্ণশীর্ণ আবাসন ব্যবস্থা, শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সুবিধার অভাব, দুর্বল যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবস্থানকে নিরুৎসাহিত করে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও শিক্ষা) মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সার্জারি অনুষদের ডিন মোহাম্মদ হোসেন, প্রিভেন্টিভ এন্ড সোস্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, প্রক্টর ও ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © Rangpur24.com 0176414680 [email protected]