লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে সফিয়ার রহমান নামে এক প্রতিবন্ধী কারাগারে। এ ছাড়া অনেকেই চড়া সুদের উপর টাকা নিয়ে সর্বশান্ত হয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন। ভুক্তভোগী সফিয়ার রহমান একই এলাকার মৃত জাফর আলীর ছেলে।
জানা গেছে, উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়াইপাড়া এলাকার দাদন ব্যবসায়ী আবু তালেব, তার ভাই তোতা মিয়া ও মানিকের ফাঁদে পা দিয়ে সুদ নেন শারীরিক প্রতিবন্ধী সফিয়ার রহমান। আর তাদের এই খপ্পরে নিঃস্ব হয়ে প্রায় ছ’মাস ধরে জেলহাজতে আছেন সফিয়ার। এদিকে বৃদ্ধ মা আর সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার স্ত্রী।
আরও জানা যায়, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য নিরুপায় হয়ে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ী তোতা মিয়াকে ফাঁকা চেক ও স্টাম্পে সাক্ষরের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেন ভুক্তভোগী সফিয়ার। আর এরজন্য তোতাকে প্রতিমাসে সুদ হিসেবে ১০ হাজার টাকা দেন তিনি। কিন্তু এভাবে কষ্ট করে ঠিকমতো সুদের টাকা দিতে পারলেও ৬ মাসপর টাকা দিতে ব্যার্থ হয় সফিয়ার। এদিকে সুদের টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ফাঁকা চেক ও স্টাম্প পূরন করেন তোতা মিয়া। পরে তার নিজের ছোট ভাই দাদন ব্যবসায়ী মানিককে দিয়ে আদালতে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা আত্মসাৎতের মামলা করে প্রতিবন্ধী সফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগে আটক হয়ে বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন সফিয়ার। এতেই যেন মা-সন্তান আর স্ত্রী ছাড়া হলেন প্রতিবন্ধী সফিয়ার।
সফিয়ারের মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাবা আমি কিছু বলতে পারবো না। আমরা যদি ওই সুদ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কিছু বলি তাহলে তারা নাকি আমার ছেলেকে জেলে পঁচে মারবে৷ সেজন্য কাউকে কিছু বলতে চাইনা। প্রয়োজন হলে বসতভিটা বিক্রি করে টাকা দিয়ে ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনবো।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সফিয়ারের ভাই অলিয়ার বলেন, আমার ভাই দাদন ব্যবসায়ী তোতা মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজর টাকা নিয়ে তার মেয়ের বিয়ে দেন। ওই টাকার সুদ ও আসল প্রায় সব দেওয়া হয়েছে, অল্প কিছু টাকা বাকি আছে। সেই টাকাও আমরা দিতে চেয়েছি, কিন্তু টাকা দিতে দেড়ি হওয়ায় তোতা মিয়া তার ভাই মানিককে দিয়ে সফিয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করান। আর সেই মামলায় আজ আমার ভাই জেলে। শুধু আমার ভাই নয়, তাদের সুদের কারণে এলাকার আরও অনেকেই বাড়ি ছাড়া।
তবে এ বিষয়ে দাদন ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, আমি সফিয়ারকে আমার ছোটভাই মানিকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিয়েছি। তার ভাই মানিক মিয়া বলেন, সবাই সুদের ব্যবসা করে। তাহলে আমরা করলে দোষের কী? টাকা দিতে পারে নাই তাই মামলা করেছি। সুদের ব্যবসা করেন না বলেন জানিয়েছেন আবু তালেব।
হাতীবান্ধা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, সফিয়ার রহমান একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আমরা তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সফিয়ারকে ছাড়িয়ে আনার জন্য যা যা করণীয় আমরা করবো।