নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন কেবল সামাজিক ন্যায়বিচারের অংশ নয়, এটি একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম মূলভিত্তি। সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন একটি জাতির সমৃদ্ধির অন্যতম প্রধান শর্ত। বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা অনেক দেশকে উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।
আধুনিক বিশ্বে নারীর উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে বহু উন্নত দেশ সফলতা অর্জন করেছে। জাপান এ ক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে, যেখানে নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে জাপানে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রবেশের হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল, তবে ১৯৯৯ সালে "Basic Law for a Gender-Equal Society" আইন প্রণীত হওয়ার পর থেকে দেশটিতে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। কর্মজীবী নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি, উদ্যোক্তা সহায়তা, কর্মক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানি প্রতিরোধ আইনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশেও নারীর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (SME) নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নারী শিক্ষা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে, এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যেমন—নারী নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, গৃহস্থালি শ্রমের স্বীকৃতির অভাব, এবং আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সীমাবদ্ধতা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন কাঠামোতে নারীদের আরও কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হলে বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই পরিকল্পনার প্রয়োজন। নারীদের প্রতি বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য শক্তিশালী নীতি গ্রহণ করতে হবে। কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা সহায়তা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
নারী উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা
নারীর উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মূলত তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে—নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, এবং বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী নারীদের কল্যাণ। এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।