চলছে ইটভাটা বিলীন হচ্ছে আবাদী জমি

৯ জানুয়ারী ২০২৫, বিকাল ৬:২০ সময়
Share Tweet Pin it

চলছে ইটভাটা বিলীন হচ্ছে আবাদী জমি

নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে আবাদি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। একশ্রেণির দালাল জমির মালিককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। জমির উপরিভাগ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বরতা হারিয়ে ফেলছে আবাদি জমি। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল আবাদে। এ ছাড়া কিছু কিছু জমিতে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার পর বড় আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে ৫ থেকে ৬ বছর সেসব জমিতে আর কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় না। আবাদি জমি থেকে মাটি কাটার পর তা পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরে। ট্রাক্টরগুলো মাটি পরিবহনে কোনো নিয়মনীতি মানছে না। ধুলাবালি উড়িয়ে সড়ক ও মহাসড়কে চলাচল করছে। এতে করে পথচারীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাদের চোখে-মুখে ধুলাবালি ঢুকে পড়ছে। এ ছাড়া হোটেল- রেস্তোরাঁর খাবারে উড়ে গিয়ে পড়ছে সেসব ধুলাবালি। এতে করে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে খাবার। সরেজমিন দেখা যায়,সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর,বাঙালিপুর,বোতলাগাড়ি ও খাতামধুপুর ইউনিয়নে প্রায় ৫০টির ওপরে ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে কেবল কামারপুকুর ইউনিয়নেই রয়েছে ২৩টি ইটভাটা। বাকিগুলো রয়েছে অন্যান্য ইউনিয়নে। এসব ইটভাটায় ইট তৈরির প্রয়োজনে দূর-দূরান্ত থেকে আবাদি জমির মাটি কেটে আনা হচ্ছে। শুধু ইটভাটায় নয়, আবাদি জমির মাটি কেটে তা ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন বসতবাড়ি তৈরির কাজেও। কথা হয় কামারপুকুর ইউনিয়নের জমির মালিক একরামুল হকের সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, ইটভাটার মালিকের সঙ্গে ২ থেকে ৩ ফুট মাটি কাটার শর্তে জমি দেওয়া হয়। কিন্তু মাটি কাটতে আসার পর তারা শর্ত মানতে চায় না। শর্ত না মেনে তারা অনেক বেশি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যায়। তারা  এমন ভাবে মাটি কেটে নিয়ে যায় যে, সেখানে বড় আকারের গর্ত তৈরি হয়। এ কারণে মাটি কাটার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ বছর সেই জমিতে আর কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া মাটি কাটার কারণে তাদের এলাকায় বৃষ্টি হলেই আবাদি জমিতে পানি জমে যায়। সেই পানি সহজে নামে না। এতে করে ফসলের আবাদ ভীষণভাবে বিঘ্নিত হয়। খাতামধুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জহির উদ্দিন   বলেন, ইটভাটার কারণে আমাদের এলাকায় আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফলের চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে আম ও কাঁঠাল আকারে ছোট হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ফসলের আবাদও মার খাচ্ছে। অবশ্য ইটভাটা মালিকরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ ইটভাটায় উঁচু চিমনি ব্যবহার করা হয়। এ জন্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। প্রতি বছর কার্তিক মাসে মাটি সংগ্রহের মাধ্যমে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়। ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন এলাকার উঁচু জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করা হয়। সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, আবাদি জমিতে ইটভাটা তৈরিতে ঘোর আপত্তি জানানো সত্ত্বেও তা আর মানা হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতর থেকে অনুমতি নিয়ে দিব্যি ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। নির্বিচারে জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরাশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। আবাদি জমি থেকে মাটি কাটার পাশাপাশি আবাদি জমিতে বসতবাড়িও গড়ে উঠছে। তাই দিনকে দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন,অনুমতি ছাড়া যারা ভাটা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।